Durga Puja 2019

দুই তীর বলে ওঠে, আসছে বছর আবার হবে

‘‘প্রতিমা গড়তে যদি যৌনপল্লির মাটির প্রয়োজন হয়, তা হলে তাঁদের জীবনযাপন থিম করতে সমস্যা কোথায়!’’

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:২৫
Share:

পুজোমণ্ডপ তো নয়, বাইরে থেকে এ যেন যৌনকর্মীদের এলাকা। ভেতরেও অনেকটা তা-ই। পুতুল, ব্যানার আর ধারাভাষ্যে
ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাঁদের নানা যন্ত্রণার কথা।

Advertisement

যৌনপল্লিকেই এ বার দুর্গাপুজোর ‘থিম’ করেছে হাইলাকান্দি জেলার মা অন্নপূর্ণা ক্লাব। বরাক উপত্যকার শিলচরে বহু পুরনো যৌনপল্লি
রয়েছে। কিন্তু এমন থিম আগে কেউ কখনও ভাবেননি। ক্লাবের সম্পাদক গৌতম ঘোষের কথায়, ‘‘প্রতিমা গড়তে যদি যৌনপল্লির মাটির প্রয়োজন হয়, তা হলে তাঁদের জীবনযাপন থিম করতে সমস্যা কোথায়!’’

গৌতমবাবুর মতে, যৌনকর্মীরা সবাই শখে এমন পেশা বেছে নেন না। অধিকাংশই পাচারকারীদের শিকার হন। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘তাই নারীপাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা খুব জরুরি।’’

Advertisement

মা অন্নপূর্ণা ক্লাবের প্রতিমাও অভিনব। অসুরের সঙ্গে যুদ্ধরতা নন দেবী। বিপন্ন নারীদের উদ্ধারকারী হিসেবেই গড়া হয়েছে তাঁকে। ডানা আছে তাঁর, গায়ে নামাবলি। পাচারের শিকার মহিলাদের উদ্ধারে ডানায় ভর করে তিনি চলে আসেন। গৌতমবাবুদের যুক্তি, মহিষাসুর বধ করে দেবীর কাজ শেষ হয়নি। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আজও তাঁকে লড়তে হচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ওই লড়াইয়ের ময়দান তৈরি করে দিতে চান তাঁরা।

এই পুজো নিয়ে অবশ্য শিলচরের যৌনকর্মীদের কোনও উৎসাহ নেই। বরং বললেন, তাঁরাও তিন বছর দুর্গাপুজো করেছিলেন। কিন্তু খরচ টানতে পারেননি।

বাঙালি-প্রধান বরাক উপত্যকার তিন জেলায় দুর্গাপুজোর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে। দীর্ঘকাল শিলচরেই জাঁকজমক ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০০৫ সাল থেকে সব আকর্ষণ টেনে নিচ্ছে হাইলাকান্দি। মন্ত্রিসভায় গৌতম রায়ের প্রভাব বাড়লে দুর্গাবন্দনাতেও রকমফের ঘটে। কাছাকাছি দু’টি বড় পুজো। যুব সমিতি ও তরুণ সংঘ। গৌতমবাবুর মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর পরে অবশ্য দুই পুজোতেই বাইরে থেকে শিল্পী
আনা বন্ধ।

ছ’-সাত বছর ধরে চমক দিয়ে চলেছে উধারবন্দের কালীবাড়ি রোড সর্বজনীন পূজা কমিটি। এ বার অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছে তারা। ভেতরে প্রাকৃতিক সুষমা। বিভিন্ন রঙের তিন শতাধিক জীবন্ত পাখি খাঁচাবন্দি। কিন্তু খাঁচাগুলি টের পাওয়া যায় না। মনে হয় যেন খোলামেলা উড়ে বেড়াচ্ছে।

শিলচরে পূর্বপাড়া অম্বিকাপুর ও হাসপাতাল রোড পুজো কমিটির এ বার শতবর্ষ। তাই বিগ বাজেটের পুজো তাদের। বড় পুজো করছে তরুণ ক্লাব, দক্ষিণ বিলপারও।

তবে কাছাড়-হাইলাকান্দিতে যত বড় পুজোই হোক, প্রতিমা নিরঞ্জন করিমগঞ্জেই আকর্ষণীয়। কুশিয়ারা নদীতে নৌকায় করে দু’দেশের
প্রতিমা আসে। মাঝনদীতে বিসর্জন হয়। দুই তীর থেকে আওয়াজ ওঠে, আসছে বছর আবার হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন