Durga Puja 2020

ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম, পুজোর ভিড় দেখলেই তাই দশ হাত দূরে!

সত্যি করে বলুন তো, এ বছর পুজোর আমেজ আছে কোথাও? আমি টের পাচ্ছি না। পুজো পুজো গন্ধ নেই। মন ভাল নেই।

Advertisement

ইশা সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৩০
Share:

পুজো পরিক্রমা থাকুক না থাকুক, আড্ডা থাকবে এটা শিওর।

এই ২০২০ অন্য বছরগুলোর থেকে আনপ্রেডিক্টেবল। কখন বছর ফুরোবে? মনেপ্রাণে তারই অপেক্ষায়। এই অবস্থায় পুজো নিয়ে চিন্তাভাবনা আসে? হাতে এক মাসেরও কম সময়। এ দিকে প্যান্ডেল নেই! এখনও বাঁশই পড়েনি শহরের অর্ধেক বড় পুজোর। এমন দিনও দেখার ছিল!

Advertisement

যাঁরা নিয়মিত ভিআইপি রোডের যাত্রী তাঁরা জানেন, এখনও বাঁশের ব্যারিকেড পড়েনি। আগে এই সময় রাস্তার দু’ধার ঢেকে যেত বিশাল হোর্ডিংয়ে। এ দিক দিয়ে গাড়ি যাবে, ওটা হাঁটা পথ, সব নির্দিষ্ট হয়ে যেত। সে সব কই?

এ বারে কি মায়ের মুখ দেখা হবে?

Advertisement

বিশ্বাস করুন, এই চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে। কোনও বছরেই প্যান্ডেল হপিংয়ে নেই আমি। দেবীর মুখ দেখি প্যান্ডেল উদ্বোধন বা প্রতিমা বিচারের সময়। এ বছর আদৌ কি এ সব হবে? স্পনসর কোথায় বড় পুজোর? তাই পুজো নিয়ে কোনও প্ল্যানও করে উঠতে পারিনি। অনেককেই জানি, ভিড় এড়াতে রাতে প্রতিমা দেখতে বের হন। আমি আবার তাতেও নেই। মনে হয়, আরও অনেকেই তো এ রকম ভেবে রাতে ঠাকুর দেখবেন। তা হলে দিনে-রাতে সমান ভিড়! তার থেকে বেটার, পুজো পরিক্রমা না হলে টিভিতে বসে ঠাকুর দেখা।

আরও পড়ুন: এ বার না হয় একটু অন্য রকম পুজো হোক

ভিড় এড়ানোর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ, ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া। এক বার ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ভিড়ের চাপে ছিটকে সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। তার পর থেকে ভিড় দেখলেই তার থেকে দশ হাত দূরে।

এ বছর একটু বদল, অন্য রকম পুজো।

জাস্ট চিল...

পুজো পরিক্রমা থাকুক না থাকুক, আড্ডা থাকবে এটা শিওর। অন্য বারের মতোই। প্রতি বছরেই পুজো আমাদের মতো অভিনেতাদের রিল্যাক্সেশনের দারুণ সুযোগ করে দেয়। আড্ডা, খাওয়া, ঘুম, যা সারা বছর করতে পারি না সে সব করা হয়ে যায়। ডায়েট, জিম নেই। মেকআপ করে ক্যামেরা ফেস করা নেই। এগুলো নতুন নয়। এ বছর একটু বদল, বাইরে যে সব বন্ধু থাকে তারা আসতে পারবে না অতিমারির কারণে। এলেই তো ১৪ দিনের কোয়রান্টিন। পুজো তত দিনে কমপ্লিট! এসে আর কী করবে? বন্দিদশা কাটার মুখে মুখেই হয়তো ফেরার তাড়া শুরু হবে। ওদের খুব মিস করব।

আরও পড়ুন: পুজোর আনন্দই যেন ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিয়েছে কোভিড

আরও একটা প্ল্যান ছিল। আমাদের আবাসনের কিছু পরিবার এক সঙ্গে হয়ে এক এক দিন এক এক রকম রান্না করবে। থিম রান্না যাকে বলে। সেটাও ভেস্তে গেল করোনার কারণে।

পুজো নেই শপিংও নেই...

সত্যি করে বলুন তো, এ বছর পুজোর আমেজ আছে কোথাও? আমি টের পাচ্ছি না। পুজো পুজো গন্ধ নেই। মন ভাল নেই। একটা বছরে অনেকে ‘নেই’, অনেক কিছুই ‘নেই’! এক এক সময় মনে হচ্ছে বছরটাই যেন নেগেটিভ ইভেন্টে ভরা। ফলে, শপিংয়ের যে ইচ্ছে জাগে সেটাও নেই। গত ছ’ মাসে কোথাও যাইনি। নতুন জামাকাপড় সংখ্যায় বেড়েছে। সেগুলোই না হয় এ বারের পুজো শপিং মনে করি!

গত তিন বছর ধরে অবশ্য পুজো শপিং হয় না আমার। সারা বছরেই শপিং করি বলে। তার আগে পর্যন্ত চারটে দিনের জন্য চুটিয়ে শপিং করতাম।

সুইগি, জোম্যাটো আছে... আমরাও আছি।

বিনা ফুলে অষ্টমীর অঞ্জলি?

মাঝে নিয়মের ফেক লিস্ট বেরোল, এই হবে ওই হবে না। পরে কলকাতা পুলিশ জানাল, পুরোটাই গুজব। তবে এটা শুনেছি, ছোট প্যান্ডেল হবে। এক দিক খোলা রাখতে হবে। আর অঞ্জলি হবে দূর থেকে। তাও ফুল ছাড়া! আমি তো ভয়েই মরছি, সবাই অঞ্জলি দিতে এলে প্যান্ডেলের ভিতরে কেমন অবস্থা দাঁড়াবে। সুস্থ থাকতে এ বছর অষ্টমীর অঞ্জলিতেও কাটা চিহ্ন।

আরও পড়ুন: অষ্টমীর সকালে আড় চোখাচোখি এবং ডেটিং: শন


সুইগি, জোম্যাটো আছে, আমরাও আছি...

এত ‘না’ আর ‘নেই’-এর ফর্দ দিতে ভীষণ বিচ্ছিরি লাগছে। তার চেয়ে বরং খাওয়ার গল্প করি। চারটে দিন এই একটা বিষয়ে কিছুতেই দাঁড়ি পড়বে না। কারণ, সুইগি, জোম্যাটো আছে... আমরাও আছি। প্রথম বছরের পুজোর কথা খুব মনে পড়ছে। দেদার খেয়েছি। মিষ্টি থেকে মোগলাই। চাইনিজ থেকে বিরিয়ানি। চার দিনের ছুটি কাটিয়ে ‘ঝাঁঝ লবঙ্গ ফুল’-এর সেটে ফিরেছি। পরিচালকের মুখোমুখি হতেই ভ্রু কুঁচকে প্রথম প্রশ্ন, ‘কি রে! একটু যেন মোটা হয়েছিস?’ যে রেটে খাওয়া হয় সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত মিলিয়ে। মুটিয়ে যাওয়া কে আটকাবে?

এ বছর দেবী মায়ের কাছে আগাম প্রার্থনা, পুজোর মাস যেন ভাল কাটে। উৎসবের চারটে দিন কেউ যেন অসুস্থ না হন। বধ হোক সংক্রমণাসুর। আগামী বছরে একসঙ্গে দু’বছরের আনন্দ না হয় পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement