প্রতীকী চিত্র
অনুষ্ঠান থেকে ছুটির দিনে, বাঙালি বাড়িতে অতি চেনা পদ পটলের দোলমা। এটি আমিষও হয়, আবার নিরামিষও। অর্থাৎ কেউ এর পুরটি মাংস বা মাছ দিয়ে বানিয়ে থাকেন, কেউ আবার পনির বা আলু দিয়ে। পুর যাই হোক না কেন, দুই-তিন পিস পটলের দোলমা যদি পাতে পড়ে তাই দিয়েই ভাত খাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু জানেন কি বাঙালির এই অতি চেনা এবং সাধের পদ ‘দোলমা’ আদতে বাঙালি পদই নয়। বরং বিদেশি?
দোলমা আদতে আর্মেনিয়ান খাবার। সেখানেও এই পদ গরম গরম খাওয়া হয়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যবহার করা হয় দোলমা বানাতে, যেমন টমেটো, বেগুন, পটল, ইত্যাদি। আর পুর হিসেবে সেখানে ব্যবহৃত হয় মাংসের কিমা, ভাত, মশলা, ইত্যাদি।
ইতিহাসবিদদের মতে, ব্রিটিশদের আসার আগে কলকাতায় যে গ্রিক এবং আর্মেনিয়ানরা থাকতেন তাঁদের হাত ধরেই বাঙালির আলাপ ঘটে পটলের দোলমার সঙ্গে। ভোজনরসিক আর্মেনিয়ানরা অনেক সময়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বনেদি বাঙালিদের জন্য নানা ধরনের পদ বানাতেন। আর সেখান থেকেই বাঙালির 'দোলমা'-আলাপ ঘটে। আর্মেনিয়ানদের দোলমা ছিল আঙুরের পাতায় মাংসের কিমা আর চালের পুর ভরা খাবার।
আবার কারও কারও মতে, নবাবদের শাসনকালে তুর্কিরা যখন এখানে আসে তাঁদের মাধ্যমে দোলমার সঙ্গে পরিচিতি ঘটে বাংলার।
দোলমা কথাটি এসেছে ‘দোলমাক’ বা ‘দোলমাদ’ শব্দ থেকে। এই তুর্কি শব্দের অর্থ পূর্ণ করা। বাংলার রান্নার ঘরে পটলের বীজ কুড়িয়ে তাতে চিংড়ি বা অন্য মাছ, মাংস থেকে পনির, পোস্ত সহ বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে ফাঁপা অংশ পূর্ণ করে যে সুস্বাদু পদ বানানো হয়, সেই পটলের দোলমা আদতে বিদেশি হলেও, বাঙালিরা তাকে সানন্দে আপন করে নিয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।