উত্তর কলকাতার বুকে বাগবাজারের এক কোণে আজও টিকে আছে এই প্রাচীন মন্দির, রয়েছে অনেক ইতিহাস।
প্রায় ২৭০ বছরের পুরোনো এই ব্যোম কালী মন্দির এক কালে ছিল জঙ্গলে ঘেরা সুতানুটি গ্রামের অংশ, যেখানে ডাকাতদের উপদ্রব ছিল নিত্যসঙ্গী।
লোকমুখে শোনা যায়, ডাকাত দল এই মায়ের পুজো না দিয়ে ডাকাতিতে বের হত না। এক কঠিন, রুদ্র রূপের প্রতি তাদের সেই অদ্ভুত নির্ভরতা মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাসে এক রোমাঞ্চকর মানবিক স্পর্শ যোগ করে।
এই দেবীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন জনৈক তন্ত্রসাধক। ভাগীরথীর তীরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে তিনি কালী সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন।
পরে বর্ধমান জেলার দামোদর তীরবর্তী অগনান গ্রামের ব্রাহ্মণ প্যালারাম ভট্টাচার্য সস্ত্রীক তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং মাতৃ আরাধনা শুরু করেন।
সেই তন্ত্রসাধকের প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুণ্ডের আসনে ঘটটি আজও পুজো করা হয়। পরবর্তীকালে সাধক প্যালারামই মায়ের মৃন্ময়ী বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী উত্তরাস্যা, মুক্তকেশী, যার পদতলে দেবাদিদেব মহাদেব শায়িত। আদপে ইনি সিদ্ধেশ্বরী।
বাগবাজারের মজে যাওয়া মারাঠা খালের দক্ষিণ পাড়ে এক কালে মাটির পর্ণকুটিরে এই দেবীর আরাধনা শুরু হলেও, এখন ২৩ ব্রিজ অ্যাপ্রোচ রোডে (বর্তমানে মোহিত মৈত্র সরণি) দাঁড়িয়ে আছে চাঁদনী স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত সমতল ছাদ বিশিষ্ট দেবীর মন্দির।
মন্দিরটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও এক গভীর আবেগ। এই মন্দিরে এসেছিলেন সারদা দেবী। মায়ের বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই মন্দিরটি যেন উত্তর কলকাতার এক শান্ত আশ্রয়।
প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর পর থেকে দেবীর অঙ্গরাগ শুরু হয়। তন্ত্রমতে পুঁথি অনুসরণ করে আজও নিত্য পুজো হয় এই মন্দিরে।
পুজোর ভোগ নিরামিষ হলেও, কেবল দীপান্বিতা কালী পুজোর দিন অন্নকূটে পুঁইশাকের সঙ্গে মাছের মাথা সহযোগে ছ্যাচড়া আমিষ হিসেবে নিবেদন করা হয়।
এক সময় এখানে পশুবলি হলেও, বর্তমানে শুধু ফল বলি দেওয়া হয়। রটন্তী এবং ফলহারিণী কালী পুজোতেও বিশেষ আরাধনা হয়।
ইতিহাসের সেই দুর্গম পথ পেরিয়ে, ভক্তির আলোর স্পর্শে বাগবাজারের ব্যোম কালী আজও জাগ্রত। কার্তিকের এই অমাবস্যায় তাই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন সেই প্রাচীন শক্তির কাছে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।