The story of Madurai's goddess Meenakshi

সতীর আর এক রূপই হল মীনাক্ষী! কেন কখনও নিদ্রা যান না দেবী?

দাক্ষায়ণী দেবী সতীর পার্বতী রূপের অনেক অবতার রয়েছে। সেই বিবিধ অবতারের মধ্যে এক জন হলেন দেবী মীনাক্ষী।

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ১৬:২২
Share:

প্রতীকী চিত্র

গভীর রাত্রে ঘুম ভেঙে গেল রাউসের। ভীষণ ঝড় আর বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে কানে আসছে করাঘাতের শব্দ। এই প্রবল দুর্যোগের রাতেও তাঁর দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে কেউ।

Advertisement

দরজা খুলে রাউস পিটার তো অবাক! এক বালিকা বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁর সামনে। বালিকা কোনও কথা না বলে তার হাত ধরে টান দিল। তিনিও কেমন যেন অবশ হয়ে গেলেন। না করতে পারলেন না। কোনও প্রশ্নও করতে পারলেন না।

বালিকার হাত ধরে তার পিছু পিছু বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। আর সেই মুহূর্তেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল তাঁর ঘর। শিহরিত হলেন রাউস। এই বালিকা তাঁকে না বাঁচালে যে তিনি...

Advertisement

সে বালিকা এখনও এগিয়ে চলেছে। পিছু পিছু চললেন রাউস। পথ ছাড়িয়ে মন্দিরের সম্মুখে এল। মন্দিরে প্রবেশ করল। তিনি কি ভিতরে যাবেন? না যাওয়াই উচিত! শেষমেশ দ্বিধা ঝেড়ে রাউস প্রবেশ করলেন মন্দিরে। মীনাক্ষী মন্দিরের গর্ভগৃহে এসে বালিকা অদৃশ্য হয়ে গেল! সম্মুখে কেবল প্রদীপ-শিখায় উজ্জ্বল স্বর্ণকান্তি দেবী মীনাক্ষীর মূর্তি।

আশ্চর্য হয়ে দেখলেন রাউস পিটার; সেই বালিকা আর মাতৃমূর্তি– দু’জনের মধ্যে তো কোনও প্রভেদ নেই! তবে কি! চোখে জল এল তাঁর। না, এ কোনও অন্ধ বিশ্বাস বা কুসংস্কার নয়। সত্যিই তিনি আছেন। মায়েরও কী আশ্চর্য লীলা! গোরা সাহেব রাউস পিটার সকলের কাছে পরিচিতি পেলেন পিটার পান্ডিয়ান নামে। নিজের উপার্জন বিলিয়ে দিলেন দেবীর চরণে।

শুরু থেকেই রাউস অন্যান্য ব্রিটিশ অফিসারদের থেকে ভিন্ন ছিলেন। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে মীনাক্ষীপট্টনমে ( মাদুরাই) যখন তিনি শাসনভার সামলাতে এলেন, তখন অস্ত্র নয় ভালবাসাকেই মূলধন করলেন। তার দান, ধ্যান ও মহানুভবতায় সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারল না যে, তারা কোনও ব্রিটিশ শাসকের অধীনে রয়েছে। তিনি যেন তাদের পিতার সমান। দেবী মীনাক্ষীও আপন মন্দিরে বসে দেখছিলেন রাউসের সৎ কর্ম। তিনি যে পরমেশ্বরী, কর্ম অনুযায়ী মানুষকে ফল দেন। তাই বর্ষার রাতে বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার পেলেন রাউস পিটার।

মীন-অক্ষির ন্যায় অক্ষি যাঁর, তিনিই মীনাক্ষী। মায়ের চোখ কখনও বন্ধ হতে পারে না, কারণ তিনি চোখ বন্ধ করলে সন্তানের দুঃখ-কষ্টের শেষ থাকবে না। তিনি নিদ্রা গেলে সন্তানের কথা শুনবে কে? তাই তাঁর চোখ সদা সর্বদাই খোলা। যেমন করে মাছের দুই চোখ সদাই খোলা। তাই শুভফল দেন তিনি।

ভাবছেন, দুর্গাপুজোর প্রাক লগ্নে দেবী মীনাক্ষীর কথা কেন আলোচনা করছি! দাক্ষায়ণী সতীর পার্বতী রূপের অনেক অবতার রয়েছে। তাঁদেরই এক জন হলেন দেবী মীনাক্ষী। মাদুরাপুরী বা মাদুরাইয়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।

কিংবদন্তি মতে, নিঃসন্তান রাজা মলয়ধ্বজ পান্ডিয়ান এবং রানী কাঞ্চনমালা পুথিরকামেষ্টসী যজ্ঞ (পুত্রসন্তান প্রাপ্তির যজ্ঞ) আয়োজন করেছিলেন। এমন সময়ে অগ্নিকুণ্ড থেকে তিন বছর বয়সী এক অতীব সুন্দরী কন্যা উঠে এসে সেই দম্পতির কোলে এসে বসে! যেমন অপূর্ব তার শ্রী, তেমন অদ্ভুত তার গঠন! দুইয়ের অধিক স্তন তার! অবশ্য যজ্ঞকুঞ্জ থেকে যিনি উঠে এসেছেন, তিনি তো অলৌকিকই হবেন।

আকাশ থেকে ভবিষ্যৎবাণী হয়– এই কন্যাকেই পুত্ররূপে প্রতিপালন কর। তোমার বংশপরম্পরা রক্ষা করবেন ইনি। আপন স্বামীর সহিত যেদিন সাক্ষাৎ হবে, সেদিন ইনি পূর্ণ হবেন। খসে পড়বে অতিরিক্ত অঙ্গ।”

তা-ই হল। সে কন্যা যেমন তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন, তেমনই তার শাস্ত্রজ্ঞান। দানব, দৈত্য সহ সমগ্র ভূমণ্ডলকে পদানত করলেন তিনি। এর পরে চললেন কৈলাস দখল করতে।

সুন্দরেশ্বর শিবের সম্মুখে এসে যোগী শিবের প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি। অবতাররূপী মীনাক্ষী দেবীর স্মরণ হল দাক্ষায়ণী সতী-কথা। আর অমনি খসে পড়ল তাঁর বর্ধিত অঙ্গ। রানি থেকে তিনি হয়ে উঠলেন পূর্ণরূপা মাতা। মাতা মীনাক্ষী স্বয়ং আদ্যাশক্তি। তিনিই অধিষ্ঠাত্রী দেবীকুলের। তিনিই স্বয়ং বিদ্যা ও বোধ।

হর-গৌরীর সেই বিবাহ হল মহা ধুমধামে। আজও মীনাক্ষী মন্দিরে বৈশাখ মাসে নীলের পুজো সময়ে নীলের বিবাহ উৎসব পালন হয়। তার কাছাকাছি সময়ে সাড়ম্বরে পালিত হয় তিরুকল্যাণম। সুন্দরেশ্বর শিব ও পার্বতী-রূপা দেবী মীনাক্ষীর বিবাহ উৎসব।

মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী মন্দির ভারতের অন্যতম প্রাচীন, প্রায় ২৫০০ বছর পুরনো এক মন্দির।

সেখানে দেবী মীনাক্ষী তার সদা জাগ্রত অক্ষিদু’টি খুলে নিত্যদিন কত রূপে, কত প্রকাশে সন্তানদের দয়া করে চলেছেন। না হলে গোরা সাহেব রাউসের কি সম্ভব হতো মায়ের কৃপা পাওয়া? নাকি ভক্তরা সকল যন্ত্রণা-দুঃখে কাতর ‘মা’ ডাকে লুটিয়ে পড়ে ফাঁকা করতে পারত নিজেদের…

তথ্যসূত্র - বিবিধ লোককথা, শানমাথা ব্লগস্পট, শ্যামলাপীঠাসর্বজনাপীঠম।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement