Jagadhatri Puja 2025

করীন্দ্রাসুরনিসূদিণী জগদ্ধাত্রী কি সত্যিই দেবী দুর্গারই রূপ? কী প্রমাণ রয়েছে

আশ্বিনের শুক্ল পক্ষে দেবী দুর্গার আরাধনা করে বাংলা। আর কার্তিকের শুক্ল পক্ষে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। দু’জনেই আদ্যাশক্তি মহামায়া।

Advertisement

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:০৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

আশ্বিনের শুক্ল পক্ষে দেবী দুর্গার আরাধনা করে বাংলা, আর তার এক মাস পর কার্তিকের শুক্ল পক্ষে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। দেবী উমা দশভুজা, তিনি অসুরদলনী রূপে পূজিতা হন। আসেন পুত্র, কন্যা সহ। অন্য দিকে, জগদ্ধাত্রী চতুর্ভুজা। তিনি একা আসেন। যদিও একদা বঙ্গে তিনিও লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ সহ পূজিতা হতেন। আজও কোনও কোনও বাড়িতে তাঁর পাশে জয়া, বিজয়াকে দেখা যায়। দুর্গাপুজোর মতো সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মহাসমারোহে জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। আবার কেবল নবমীতে, তিন দিনের পুজো অর্থাৎ সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিন তিথির পুজো করার রেওয়াজও আছে।

Advertisement

দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী দুই দেবীই ত্রিনয়নী। দেবী দুর্গার মতো জগদ্ধাত্রীও সিংহবাহিনী। আদতে দু’জনেই আদ্যাশক্তি মহামায়া। জগদ্ধাত্রী স্তোত্রে রয়েছে “জয়দে জগদানন্দে জগদেক প্রপূজিতে/ জয় সর্ব্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমোহস্তুতে।” দুর্গার আর এক রূপ হৈমবতী। মহিষাসুরের সংহার করতে দুর্গা চতুর্ভুজা রূপে আবির্ভূত হন। সেটিই জগদ্ধাত্রী রূপ।

শ্রীশ্রী চণ্ডীতে রয়েছে, যুদ্ধের সময় মহিষাসুর নানান রূপ ধারণ করে দেবীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। মহিষাসুর হস্তীরূপও ধারণ করেছিলেন। হস্তীরূপী মহিষাসুরকে শায়েস্তা করতে দুর্গা এক চতুর্ভুজা রূপ ধারণ করেন। চক্র দিয়ে হস্তিরূপী অসুরের শুঁড় কেটে দিয়েছিলেন চতুর্ভুজা দেবী। দেবীর সেই রূপটি হল জগদ্ধাত্রী। সংস্কৃতে হাতির অপর নাম করী। কথিত আছে, দেবী জগদ্ধাত্রী করী বা হস্তিরূপী অসুর করীন্দ্রাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই তাঁকে বলা হয় করীন্দ্রাসুরনিসূদিণী। মাতৃপ্রতিমায় দেখা যায় জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দণ্ডায়মান।

Advertisement

আবার পৌরাণিক কাহিনিও প্রমাণ করে দেবী উমাই জগদ্ধাত্রী। মহিষাসুর বধের পর দেবতারা জয়োল্লাসে ব্যস্ত। দেবতাদের মনে জন্ম নিল অহংকার! দুর্গা তাঁদের সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই অসুর বধ হয়েছে তাঁদেরই শক্তিতে। মহিষাসুর, ব্রহ্মার বলে বলিয়ান। তাকে বধ করতে কেবল একটি নারী দেহের প্রয়োজন ছিল, অসুর নিধনে দুর্গার ভূমিকা কেবল এইটুকুই। দেবতাদের অহংকার, গর্ব দেখে পরমেশ্বরী দেবী হাসলেন। একটি তৃণখণ্ড তিনি আড়াল থেকে দেবতাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ইন্দ্রের বজ্র তৃণটিকে ধ্বংস করতে পারল না। অগ্নি তৃণটিকে পোড়াতে ব্যর্থ হল। পবন পারল না উড়িয়ে নিয়ে যেতে। বরুণ তৃণটিকে জলস্রোতে প্লাবিত করতে পারল না। তার পর দেবতাদের সন্মুখে আবির্ভূতা হলেন এক পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভুজা দেবী। তিনিই জগদ্ধাত্রী। সর্বসংহারিণী দুর্গা সত্ত্বগুণ নিয়ে ধরা দিলেন জগদ্ধাত্রী ব্রহ্মময়ী রূপে। জগৎকে যে তিনি ধারণ করেন, তাই তিনি জগদ্ধাত্রী।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement