Jorasanko Thakurbari Durga Puja

প্যারিস থেকে আনানো গয়না পরেই বিসর্জন হয় প্রতিমার! কেন বন্ধ হয়ে যায় ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজো?

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে কোন কথা দারুণ প্রচলিত? কী ছিল এই বনেদি বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য, জেনে নিন সেই ইতিহাস।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৮
Share:

প্রতীকী চিত্র

ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ এবং মূর্তিপুজোর বিরোধী হওয়ার আগে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেও হতো দুর্গাপুজো। তাও সাড়ম্বরেই। রবি ঠাকুরের বাড়ির দুর্গাপুজোর জাঁকজমক দেখলে নাকি চোখ টেরিয়ে যেত সকলের। কিন্তু কেন বন্ধ হল সেই পুজো? কীই বা ছিল এই বাড়ির দুর্গাপুজোর বিশেষত্ব?

Advertisement

প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে প্রসার ঘটেছিল ব্রাহ্ম ধর্মের। ঠাকুরবাড়িতেও বন্ধ হয় মূর্তিপুজো। কিন্তু তার আগে ধুমধাম করেই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে দুর্গাপুজো হতো। ১৭৮৪ সালে শুরু হয় এই বাড়ির দুর্গাপুজো।

জানা যায় ঠাকুরবাড়ির ঠাকুর দালানেই তৈরি হতো প্রতিমা। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের দাদু অর্থাৎ নীলমণি ঠাকুরের হাতে ঠাকুরবাড়ির পুজোর সংকল্প হয়েছিল। তবে পুজোর রমরমা এবং জাঁকজমক বৃদ্ধি পায় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের হাত ধরেই। আর সেই জাঁকজমকের মাত্রা এমন পর্যায় পৌঁছে গিয়েছিল যে কলকাতার বুকে সেই সময় যে কটি বিখ্যাত দুর্গাপুজো হতো তাতে নাম করে নিয়েছিল ঠাকুরবাড়ির পুজো।

Advertisement

সেই সময় দুর্গাপুজোয় কোন বাবু বা বনেদি বাড়িতে কত টাকা খরচ করা হচ্ছে, কী কী হচ্ছে সেটা নিয়ে রীতিমত রেষারেষি চলত। চলত কার বাড়িতে সব থেকে বেশি মানুষ ভোগ খেয়েছে, কার বাড়ির ভোগ সব থেকে সুস্বাদু হয়েছে, কে প্রতিমাকে কত গয়না পরিয়েছে সে সবের আলোচনাও। আর এই প্রতিযোগিতায় কি আর অংশ না নিয়ে থাকতে পারতেন শহরের সেই সময়ের অন্যতম খ্যাতনামা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর? ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিল।

যাঁরা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি গিয়েছেন তাঁরা নিশ্চয় জানেন, শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়ি অর্থাৎ কলকাতার জনপ্রিয় দাঁ বাড়ি এবং ঠাকুরবাড়ি একদমই কাছাকাছি অবস্থিত। আর এই দাঁ বাড়ি নিয়ে লোকমুখে এমনই প্রবাদ ঘুরত যে দেবী নাকি মর্ত্যে এসে সেখানেই গহনা পরেন। অর্থাৎ সেই বনেদি বাড়িতে দেবীকে অঢেল গয়নায় সাজিয়ে তোলা হতো পুজোর সময়। দাঁ বাড়ির দেবীর অলঙ্কারের ধার বা ভারে কলকাতার আর কোনও বাবুর বাড়ি আসতে পারত না। শোনা যায় সেই সময় পড়শিকে টক্কর দিতে দ্বারকানাথ প্যারিস থেকে দেবীর গয়না আনিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই গয়না পরিয়েই বিসর্জন হয়েছিল দেবীর। রেষারেষি চলত কার প্রতিমা কত বড় হল সেটা নিয়েও।

জানা যায়, পুজোর আগে ঠাকুরবাড়ির তরফে ওড়ানো হতো শঙ্খচিল। সেই পাখির দেখানো পথেই নাকি দেবী আসতেন। আর বিজয়া দশমীর দিন ওড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। দশমীর দিনেই কেবল ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা বাড়ির ছাদে উঠতে পারতেন, বা অনুমতি পেতেন। ঠাকুরবাড়ির প্রতিমা নাকি গড়া হতো প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ত্রী দিগম্বরী দেবীর মুখের আদলে। এ ছাড়া এও জানা যায়, ঠাকুররা যেহেতু ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণের আগে বৈষ্ণব ছিলেন তাই সেই বাড়িতে পাঁঠাবলি হতো না, বরং পুজোর সময় বলি হতো কুমড়োর।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement