কালীপুজো আসন্ন। এ বাংলায় দুর্গাপুজোর বিসর্জন মানেই যেন কালীপুজোর আগমনী।
আর সেই কালীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কত না লোকবিশ্বাস আর অলৌকিক গল্প! তেমনই এক চমকপ্রদ কাহিনি লুকিয়ে আছে হাওড়ার মির্জাপুর-বাঁকিপুর স্টেশনের অদূরে, জগতনগরে।
শোনা যায়, প্রায় ৩৫০ বছর আগের কথা। ঝঞ্ঝাটহীন এক সন্ধ্যায় নয় বছরের এক ব্রাহ্মণ কন্যা, আন্দি ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পাড়ি দেয় পরপারে।
শোকাতুর গোটা গ্রাম। কানা নদীর পাড়ে চিতা সাজানো হল তার সৎকার হবে বলে। মুখাগ্নিও হল নিয়ম মেনে।
কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে চিতা, এমন সময় হঠাৎই আকাশ ভেঙে নেমে এল এক প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ো হাওয়া।
প্রাণ বাঁচাতে ভিড়ের মানুষ তখন যে যেদিকে পারে ছুটছে, মুহূর্তের মধ্যে শ্মশান শূন্য। শুধু দূরে একলা জ্বলছে সেই চিতা!
সেই সময় কাছেই ধ্যানমগ্ন ছিলেন এক সন্ন্যাসী। তিনিই পান স্বপ্নাদেশ। আদেশ এল – আধপোড়া সেই মৃতদেহ যেন চিতা থেকে সরিয়ে কবর দেওয়া হয়। আর তার উপর তৈরি করতে হবে মা আনন্দময়ীর মূর্তি।
এমনই এক অলৌকিক ঘটনাতেই জন্ম জগতনগরের এই কালী মন্দিরের।
প্রথম দিকে সন্ন্যাসী কেবল ডাল-পালা দিয়ে একটি ছাউনি তৈরি করে ঘট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দির গড়া হয়নি তখন।
পরে ১২৯৪ বঙ্গাব্দে গ্রামের ব্যবসায়ী কৈলাস দত্ত মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি ছোট মন্দির তৈরি করেন।
বেনারস থেকে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর মূর্তি। জমি দান করেন চন্দননগরের জমিদার সরকাররা।
বর্তমানে ভক্তদের দানে তৈরি হয়েছে ৬৫ ফুট উচ্চতার সুবিশাল মন্দির, যার নির্মাণে খরচ হয় ৬৫ লক্ষ টাকা।
মন্দিরের আদলটি দেখলেই দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা মনে পড়বে, কিন্তু দেবী এখানে আনন্দময়ী কালী।
বর্তমানে বংশপরম্পরায় দিগম্বর চক্রবর্তীর বংশের হাতেই রয়েছে এই পুজো পরিচালনার ভার।
লোকমুখে চালু আছে, কৈলাস দত্ত মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময় যে পিতলের ঘট স্থাপন করেছিলেন, শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও তার জল নাকি আজও পাল্টানো হয়নি! সেই একই ঘটে চলছে পুজো।
কালীপুজোর সময় এখানে কার্যত উৎসবের মেজাজ। দেবীর ভোগে লুচি, খিচুড়ি, পায়েসের সঙ্গে থাকে নানা রকমের ফলাহার।
জাগ্রত দেবী হিসেবে খ্যাতি আছে আনন্দময়ী কালীর।
তাই শুধু কালীপুজো নয়, সারা বছর ধরেই এই মন্দিরে ভিড় জমান বহু ভক্ত। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)