এই ধরনের প্রতিমা প্রচলিত বিশ্বাসের বাইরে হলেও এর পিছনে রয়েছে কিছু ঐতিহাসিক এবং শাস্ত্রসম্মত ব্যাখ্যা।
কেন সিংহের বদলে ঘোড়া? দুর্গার বাহন হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। এর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ এখানে লেখা হল।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেবীকে যোদ্ধারূপে পুজো করতেন। যেহেতু যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই দেবীর যোদ্ধারূপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি দেবীর বাহন হিসেবে ঘোড়াকে স্থাপন করেন। আজও অনেক জায়গায় সেই প্রথা মেনে এই ধরনের প্রতিমা তৈরি করা হয়।
শাক্ত ও বৈষ্ণব মতের বিভেদ: একসময় শাক্ত এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে পুজো নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। শাক্তরা দেবীর বাহন হিসেবে শক্তির প্রতীক সিংহকেই প্রাধান্য দিতেন।
কিন্তু বৈষ্ণব মতাবলম্বীরা, যাঁরা একটু ভিন্ন প্রথা অনুসরণ করতেন, তাঁদের প্রতিমায় দেবীর বাহন হয় ঘোটকমুখী সিংহ। এই কারণে এখনও কিছু কিছু পুরনো বাড়িতে এমন প্রতিমা দেখা যায়।
ব্রিটিশ আমলের প্রভাব: কিছু ইতিহাসবিদের মতে, ব্রিটিশ আমলে জমিদার বাড়িগুলিতে দুর্গাপুজোর জাঁকজমক বেশি থাকত। যেহেতু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতীক ছিল ঘোড়া, তাই কোম্পানিকে খুশি করতে জমিদাররা তাদের প্রতিমায় সিংহকে ঘোড়ার মতো রূপ দিতেন।
শাস্ত্রীয় তাৎপর্য: এছাড়াও, দেবী দুর্গার আগমন এবং বিদায় ভিন্ন ভিন্ন বাহনে হয়, যা হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত হয়। এই বাহনগুলি হল - দোলা, নৌকা, হাতি, ঘোড়া এবং পালকি।
যদি সপ্তমী বা দশমী শনিবার বা মঙ্গলবার হয়, তবে দেবী ঘোড়ায় চড়ে আসেন অথবা বিদায় নেন। এই মত থেকেও দেবীর বাহন হিসাবে ঘোড়াকে রাখা শুরু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। শাস্ত্রীয় মতে, দেবীর বাহন হিসেবে ঘোড়া অশুভ ফল বয়ে আনে, যা সমাজে অস্থিরতা এবং যুদ্ধ নির্দেশ করে।
সুতরাং, দুর্গাপুজোর প্রতিমায় সিংহের বদলে ঘোড়ার উপস্থিতি নিছক একটি ব্যতিক্রম নয়, বরং এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ দিনের ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা। (এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ)।