বিশ্বকর্মা পুজো মানেই শরতের নীল আকাশে রং-বেরঙের ঘুড়ির মেলা। ভাদ্র সংক্রান্তির দিন আকাশের দখল নেয় পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গারা। ঘুড়ি আর বিশ্বকর্মা পুজোর এ হেন দোস্তির কারণ কী?
পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা হলেন দেব শিল্পী। তিনি শ্রেষ্ঠ স্থপতি ও বাস্তুকার। ঋক বেদ অনুসারে বিশ্বকর্মা যন্ত্রবিদ্যার জনক।
বিশ্বকর্মা শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকাপুরী, পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ, রাবণের সোনার লঙ্কা নির্মাণ করেছিলেন। বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা দেবতাদের আকাশ যান ও ভূষণ নির্মাতা।
দেবতাদের জন্য উড়ন্ত রথ বানিয়ে ছিলেন বিশ্বকর্মা। মনে করা হয়, বিশ্বকর্মার আকাশ যান বা উড়ন্ত রথ নির্মাণকে স্মরণ করতেই তাঁর পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানো হয়।
আবহাওয়াগত কারণও রয়েছে। নীল আকাশ, সাদা মেঘ। শরতে বৃষ্টির সম্ভাবনা তেমন থাকে না। মৃদু হাওয়া বয়ে চলে। ঘুড়ি ওড়ানোর পক্ষে যা আদৰ্শ।
ঘুড়ি ওড়ানোর নেপথ্যে আছে সমাজতাত্ত্বিক কারণ। বিশ্বকর্মা শ্রমজীবী মানুষের আরাধ্য দেবতা। কলকারখানার শ্রমিক, নির্মাণকর্মী, সূত্রধর, তন্তুবায়, যানবাহনের চালক, কামাররা তাঁর পুজোয় মেতে ওঠেন।
পুজোর একটা দিনে বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের হাড়ভাঙা খাটুনি থেকে মুক্তি মেলে। আকাশে উড়তে থাকা ঘুড়ি যেন শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
পুজো মানেই উৎসব, আনন্দ-আয়োজন। উৎসব উদ্যাপনের নানা মাধ্যম রয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর ক্ষেত্রে ঘুড়ি ওড়ানো সে মাধ্যম।
এ দিন শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবক, সব বয়সীরাই ঘুড়ি নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসে। হপ্তাখানেক আগে থেকে চলে সুতোয় মাঞ্জা দেওয়ার পালা। পাড়ায় পাড়ায় ঘুড়ি বানানো হয়।
ঘুড়ির লড়াই হয়। দিনে দিনে বহর কমে এলেও, আজও ঘুড়ি ওড়ানো বিশ্বকর্মা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।