Durga Puja Myths and Facts

কেন হয় বোধন? কী তার মানে? ভেবে দেখেছেন কি?

বোধন কথাটি মূলত চলিত। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ব্যপি বিরাট কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন পূজা বলে ‘বোধন’ হিসেবে পরিচিত। মূল শাস্ত্রীয় শব্দটি হল ‘কল্পারম্ভ’!

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২০
Share:

ষষ্ঠীর সন্ধ্যা। মস্ত দু’খানা প্রদীপের আলোয় আলো হয়ে আছে মণ্ডপের সম্মুখে পোঁতা বেল গাছটির শাখা। সমবেত এয়ো নারীর দল এসে জড়ো হয়েছেন সেই বেল তলায়। উলুধ্বনিতে মুখরিত হল প্রাঙ্গণ। মা এসেছেন, বেল বরণ শেষে হবে মায়ের বোধন।

Advertisement

আচ্ছা কখনও কী ভেবে দেখেছেন, কেন এই বোধন? কি-বা এই বোধনের তাৎপর্য? কেন বোধন অনুষ্ঠান করা হয় পূজারম্ভের আগে?

বোধন কথাটি মূলত চলিত। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ব্যপি বিরাট কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন পূজা বলে ‘বোধন’ হিসেবে পরিচিত। মূল শাস্ত্রীয় শব্দটি হল ‘কল্পারম্ভ’! কল্প অর্থাৎ বৈদিক প্রথাগত ধর্মগঠিত ক্রিয়া এবং উৎসব। আরম্ভ মানে সূত্রপাত।

Advertisement

এই বোধন বা কল্পারম্ভের কারণটি হল দেবতার ঘুম ভাঙানো। শাস্ত্রকরেরা বলছেন, আমাদের বৎসর হল দেবতাদের অহোরাত্র। অর্থাৎ ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত্রিকাল। মাঘ থেকে আষাঢ় মাস হল দিন এবং শ্রাবণ হতে পৌষ হল রাত্রি। রাত্রি কাল মানেই হচ্ছে ঘুমের সময়, সেই সময় তাদের ঘুম ভাঙানো নিষ্ঠাভরে হওয়া উচিত হঠাৎ করে হাঁকডাক করে তার ঘুম ভাঙ্গালে, তিনি ক্রুদ্ধ হতে পারেন। তাই এই কল্পারম্ভ বা বোধন পূজার অবতারণা করা হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে ধীর লয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে একটু একটু করে ঘুম ভাঙাতে হবে দেবীর।

তবে এই বোধনের ভাগ আছে। বংশানুক্রমে যে বাড়িগুলিতে দেবীর পূজা হয়ে আসছে তারা মূলতঃ দুই প্রকার বোধনের অনুসারী হন-

১. নবম্যাদি কল্পারম্ভ এবং ২. প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ

নবম্যাদি কল্পারম্ভ হল ১৩ দিনের পূজা। কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী পর্যন্ত ১৩ দিনের পূজার্চনা। প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ হল ৬দিনের পূজা। মহালয়ার অমাবস্যার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠীর দিন।

আরেকটি বোধনের বিধান দেওয়া আছে বারোয়ারি মন্ডপ বা সর্বজনীন পূজাগুলির জন্য। কারণ সেখানে দেবীর বোধন ১৩ দিন বা ৬ দিন ধরে করা সম্ভব নয়। তাই ষষ্ঠীর দিনেই সারা হয় বোধন। সেই বোধনের নাম ‘ষষ্ঠ্যাদি বোধন’।

আমাদের আশেপাশে যত বারোয়ারি পূজামণ্ডপ সবাই এই রীতিকে অনুসরণ করে মায়ের নিদ্রা ভাঙান। আমরা বলি, হে উষা, হে মা, হে ধরিত্রি দুহিতা মাতা তুমি উদয় হও, প্রকাশ হও। শস্য দাও, প্রাণ দাও, আলো দাও।

তথ্যসূত্র:

বিচিত্র দেবতা (প্রবন্ধ সংকলন তৃতীয় খন্ড , সংকলক সুকুমার সেন), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পঞ্জিকা ও পুরোহিত দর্পণ

ছবি: অমিতাভ গুপ্ত

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন