দেশ ভাগের পর থেকে উদ্বাস্তুরা এসে যাদবপুর কাটজুনগরের এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তার পরে ১৯৫০ সাল থেকে তাঁদেরই উদ্যোগে, জোগাড়যন্ত্রে দুর্গাপুজোর প্রচলন। কেউ বাঁশ-কাঠ, কেউ কাপড় প্রভৃতি জোগাড় করে মণ্ডপ বাঁধা হল। তার পরে প্রতিমা কিনে এনে নিজেদের দলেরই এক ব্রাহ্মণকে দিয়েই হল মায়ের আরাধনা। সেই থেকে আজও ঘরোয়া পরিবেশ অটুট এই পুজোয়। শাস্ত্রীয় আচার বিশেষ ভাবে মানা হয় এখানে। পুজোপাঠের সময়ে পুজো প্রাঙ্গণে পাড়ার মানুষেরা জমায়েত করেন। মায়ের প্রসাদ সর্ব প্রথম পাড়ার সবচেয়ে প্রবীণ ব্রাহ্মণ মানুষটির হাতে তুলে দিয়ে তবেই সবাইকে বিতরণ করার রেওয়াজ এখানে।
পঞ্চমীর সকালে নারী-পুরুষ একত্রে আগে থেকে মহড়া দিয়ে রাখা তাঁদের স্বরচিত গান পরিবেশন করেন। এর পরে ষষ্ঠী থেকে নবমী অবধি চলে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য নানা স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভক্তিমূলক গান, পুরনো বৈঠকি গান, ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, মহিলাদের শঙ্খ-ধ্বনি, মোমবাতি জ্বালানোর প্রতিযোগিতা, তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন শো-- পুজোর পাঁচ দিন জমজমাট পরিবেশ।
কলোনির সম্পাদক বলেন, "প্রাচীন পন্থার মধ্যেও আমরা ছক ভেঙে নতুনত্ব আনতে সচেষ্ট। এর আগে এলাকার সাফাইকর্মীদের দিয়ে আমরা পুজোর উদ্বোধন করিয়েছি। এ ছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীরাও আমাদের পুজো উদ্বোধন করে গিয়েছেন। এ বছর আমাদের সিদ্ধান্ত, এলাকার সব অশীতিপর মানুষেরা আগামী চতুর্থীর দিন পুজোর সূচনা করবেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও পাড়ার দশ জন কৃতী মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সংর্বধনা ও পুরস্কার প্রদান করা হবে।"
বাবুঘাট বা গঙ্গাবক্ষে নয়, সাবেক এই পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় এলাকারই পুরসভা অনুমোদিত এক পুকুরে।
প্রতিমা শিল্পী : প্রশান্ত পাল
পথ-নির্দেশ : যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশায় কাটজুনগর। রিকশা স্ট্যান্ডের সামনেই পুজো।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।