পুজোর আমেজ পেতে এখন অনেকেই কুমোরটুলি যান। কিংবা এমনিও অনেক সময়ে অনেকেই কুমোরটুলি হানা দেন বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা একলাই। মূল উদ্দেশ্য যদিও থাকে চুটিয়ে ফটো তোলা। কিন্তু জানেন কি, মূর্তি তৈরির এই আঁতুড়ঘরেই লুকিয়ে আছে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান? ‘ট্রিপশিপ ট্রাইব’ তরফে এক 'ঐতিহাসিক ওয়াক' ঘুরিয়ে দেখাল সেগুলিই।
সবার আগে বলা যাক, কুমোরটুলির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা বাণেশ্বর মন্দিরটির কথা। এটি কলকাতা হেরিটেজ গ্রেড ওয়ান সাইট।
বনমালী সরকার স্ট্রিটে এই মন্দিরটিতে এক সময়ে টেরাকোটার কাজ দেখা যেত। এখন তা ভগ্নপ্রায়। গাছের শিকড় মন্দিরকে প্রায় পুরোটাই গ্রাস করেছে। তবে ভিতরে এখন দেবাদিদেব বিরাজ করছেন। আনুমানিক ১৭৩০-৪০ সালে এটি নির্মিত হয়েছে বলেই মনে করা হয়। জানা যায়, এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বনমালী সরকার।
কুমোরটুলি ঘাট থেকে রবীন্দ্র সরণির দিকে এখানকার বিখ্যাত পুজোটিকে ছাড়িয়ে এগোতে গেলেই প্রথম যে গলিটি বাঁ হাতে ঢুকে যাচ্ছে, সেটা দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ুন। পাবেন গোপেশ্বর পাল অ্যান্ড সন্সের স্টুডিয়ো।
এখানে এলেই চোখে পড়বে ভারতের বিভিন্ন মনীষী– মূলত রামকৃষ্ণদেব, স্বামীজির মূর্তি। আর গোপেশ্বর পালের পৌত্রের সাক্ষাৎ পেলে তো কথাই নেই! জেনে নিতে পারবেন সমস্ত ইতিহাস।
শোভাবাজার মেট্রো থেকে নেমে রবীন্দ্র সরণি ধরে কুমোরটুলির দিকে যেতে গেলেই ডান হাতে নজরে পড়ে একটি ভাঙাচোরা মন্দির।
শোভাবাজারের অন্যতম প্রাচীন শিব মন্দির হল এই রামেশ্বর মন্দির। নন্দরাম সেন যার প্রতিষ্ঠাতা।
কেবল বাণেশ্বর বা রামেশ্বর মন্দির নয়। কুমোরটুলি থেকে একটু এগোলে রবীন্দ্র সরণির উপরেই রয়েছে ব্ল্যাক প্যাগোডা। গোবিন্দরাম মিত্র এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।
এই কুমোরটুলিতেই রয়েছে কলকাতার ‘রেডিয়োম্যান’ অমিতরঞ্জন কর্মকারের দোকান। আজও সেই একচিলতে দোকানের সামনে গেলে দেখা মেলে গ্রামোফোন থেকে পুরনো দিনের ক্যাসেট প্লেয়ার, রেডিয়ো– সমস্ত কিছুরই।
এখানেই রয়েছে ঢাকেশ্বরী মন্দির। ঢাকা থেকে নিয়ে আসা বিগ্রহ সেখানে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন।
তা হলে আর কী! এ বার কুমোরটুলি গেলে কেবল 'ফটো সেশন' নয়, বা গঙ্গার পাড়ে আড্ডা নয়। ঘুরে দেখুন, ছুঁয়ে দেখুন শহরের বুকে থাকা অজানা ইতিহাসকে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)