সংগৃহীত চিত্র।
আলো ঝলমলে কলকাতা কেবল দুর্গাপুজোতেই মজে থাকে না। কালীপুজো শেষে এ বার নতুন করে মেতে ওঠার পালা। প্রতিমার হাত ধরে শহরের শিল্পীদের সুনাম এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ডানা মেলছে। এ বার জগদ্ধাত্রীও সেই তালিকায় নাম লেখাল। এক সময়ে এই পুজো বলতেই কেবল চন্দননগর আর কৃষ্ণনগরের কথা মনে আসত, কিন্তু সময়ের ফেরে সেই ছবিটা বদলাচ্ছে দ্রুত।
কুমোরটুলি এখন ব্যস্ত। মাটির ভাঁজে ভাঁজে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। এই বছর বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমিয়েছে মোট ৭টি জগদ্ধাত্রী প্রতিমা— অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইতালি, এই চার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছেন দেবী। এই সংখ্যাটা দুর্গা প্রতিমার তুলনায় এখনও বেশ কম, কিন্তু এই শুরুটুকুই ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। মৃৎশিল্পী ও সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক বাবু পালের কথাতেই সেই আশার সুর। তিনি জানান, দিনে দিনে সব পুজোর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে প্রতিমার অর্ডারও বেড়েছে। দুর্গা-কালীর মতোই এ বার জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বাজারও ভাল। ছোট থেকে বড় মূর্তির অর্ডার বেশি হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রবণতা চোখে পড়ছিল, তবে এ বার তা রীতিমতো রমরমা। এক সময় যেখানে ২০০০-২২০০টি প্রতিমার বরাত মিলত, এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে প্রায় ৪০০০-এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। সব মিলিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে কলকাতার বরাত প্রায় ৫০০০ ছুঁতে চলেছে। শুধু বারোয়ারি বা বড় পুজোই নয়, সঙ্গে হাজার খানেকের বেশি ছোট প্রতিমা তৈরি হচ্ছে বাড়ির পুজোর জন্য। আগে যে প্রতিমা ৫-৬ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তার উচ্চতা এখন ১২ ফুটে গিয়ে ঠেকেছে।
কুমোরটুলির শিল্পীদের দাবি, জগদ্ধাত্রী পুজোর বহর যে ভাবে কলকাতায় বাড়ছে, তাতে আর বেশি দিন লাগবে না চন্দননগরকে টেক্কা দিতে। শহরের আনাচে-কানাচে এখন জগদ্ধাত্রী উৎসবের প্রস্তুতি। উৎসবের এই জোয়ারে শিল্পীরা খুশি, কারণ মাটির কাজে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।