প্রতীকী চিত্র।
কালীপুজো আর ভাইফোঁটা পেরোতেই বাঙালির মনে আবার উৎসবের রেশ। এ বার পালা জগদ্ধাত্রীর। বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রামে এই সময় জেগে ওঠে এক অন্য মেজাজ। এখানকার পুজোটি যে প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো! জনশ্রুতি, স্বয়ং ধাত্রীমাতা জগদ্ধাত্রীর নাম থেকেই নাকি এই জনপদের নাম হয়েছে ধাত্রীগ্রাম। বোঝাই যায়, এই দেবীর মাহাত্ম্য ঠিক কতটা গভীরে প্রোথিত।
গল্পের শুরু আরও আগে। তিনশো বছর আগেকার কথা। তখন নদিয়া জেলায় ছিল ব্রহ্মশাসন মহল্লা নামে এক জায়গা। সেখানকারই চন্দ্রপতি গোষ্ঠীর এক পণ্ডিত সপরিবার ধাত্রীগ্রামে এসে বাস শুরু করেন। শিক্ষাবিস্তারে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য— নিজের হাতে গড়েছিলেন সংস্কৃত শিক্ষার গুরুকুল। নবদ্বীপ থেকেও পণ্ডিতরা আসতেন সেখানে পাঠ দিতে।
এরই মধ্যে এক দিন চন্দ্রপতি গোষ্ঠীর এক গৃহবধূ স্বপ্নাদেশ পান। বাড়ির কাছের পুকুরেই নাকি দেবী জগদ্ধাত্রীর সাক্ষাৎ মেলে। আর তার পরই শুরু হয় এই পুজো। প্রথম দিকে হোগলাপাতার ছাউনি দেওয়া মণ্ডপে সেই আরাধনা শুরু হয়েছিল। এই জগদ্ধাত্রী দেবী কিন্তু অন্য রূপে পূজিতা হন— তিনি এখানে নরসিংহ বাহনে অধিষ্ঠিত। স্থানীয়েরা এই দেবীকে 'ধাত্রীদেবী' হিসেবেই পুজো করে আসছেন সেই তখন থেকে।
গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, দেবী খুবই জাগ্রত। অনেকেই ধাত্রীগ্রাম নামের নেপথ্যে দেবীর সেই জাগ্রত মাহাত্ম্যকেই কারণ বলে মনে করেন। সেই তিনশো বছরের প্রাচীন রীতিনীতি আজও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয়। আর এখানকার পুজোর প্রধান আকর্ষণ হল নবমীর দিনের ভোগ। মাছে-ভাতে বাঙালির দেবীর ভোগে থাকে হরেক রকম মাছ! বাসমতি চালের খিচুড়ি, তেরো রকমের ভাজা, তরকারি, পায়েসের সঙ্গে থাকে মাছের নানান পদ। মালসা করে সেই প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যা নেওয়ার জন্য ভিড় জমে চোখে পড়ার মতো। পুজোর ক’দিন গ্রাম জুড়ে থাকে এক আনন্দময় উৎসবের আবহ। আশপাশের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন। শুধু তাই নয়, দরিদ্রসেবার উদ্দেশ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল সংগ্রহ করা হয়। মনস্কামনা পূরণের জন্য অনেকে মন্দিরের পাশের পুকুর থেকে স্নান সেরে দণ্ডিও কেটে থাকেন। উৎসবের শেষেও যেন একটা অপার শান্তি আর ভক্তির নির্মল স্রোত বয়ে চলে ধাত্রীগ্রামের বুকে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।