পারছে না পাকিস্তান। উঠতে গিয়ে পিছলোচ্ছে, ছিটকে পড়ছে। উন্নয়নের জায়গায় পতন। অর্থনীতিতে আরও বিপর্যয়। সামরিক ব্যয় বাড়ছে তো বাড়ছেই। নতুন প্রকল্পে টাকা নেই। সন্ত্রাস ছাড়া রফতানি করার মতো কিছুই নেই। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সন্ত্রাসে লাগাম না দিলে সর্বনাশ হবে। আইএসআই, সেনাবাহিনীকে সংযত থাকতে হবে। তাদের সন্ত্রাসী গড়ার কারখানায় রূপান্তরিত করলে বিপদ। সত্যিটা উপলব্ধি করেও নীরব পাকিস্তান সরকার। লজ্জায় কুঁকড়োচ্ছে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে। চোখের সামনে তরতরিয়ে কোথায় উঠে গেল দেশটা। তলায় পড়ে রইল পাকিস্তান। একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পর সংশয় ছিল বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদদের। তাঁরা একবাক্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশ বাঁচবে কিনা সন্দেহ। বলার কারণ ছিল। অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের আকাল। ১৯৭২-এ খাদ্য উৎপাদন মাত্র ৯৯ লাখ টন। দু'বেলা দু'মুঠো জোটাতে বিদেশে হাত পাতা। হতদরিদ্র ৮৮ শতাংশ। তাঁরাও বাঁচার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু বাস্তবটা ছিল বড্ড কঠিন। মাথা পিছু আয় মাত্র ১২৯ মার্কিন ডলার। কুড়িয়ে বাড়িয়ে প্রথম সরকারি বাজেট ৭৮৬ কোটি টাকার। ওই টাকায় কী হবে! গর্ত সব জায়গায়। ভরাট হবে কী দিয়ে! নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বিদেশি সাহায্য অপ্রতুল। বহু দেশ তখনও স্বীকৃতি দিতে ইতস্তত করছে। ভাবছে, যে দেশের বাঁচা-মরার ঠিক নেই, তাকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মান দিয়ে কী লাভ।
আরও পড়ুন: আতঙ্কে শুরু, স্বস্তিতে শেষ, গুলশন হামলাই বাংলাদেশের টার্নিং পয়েন্ট
সেই বাংলাদেশকেই এখন মাথায় করে নাচছে উন্নত দেশগুলো। বলছে, উন্নয়নের নবতম উদাহরণ বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল সব দেশেরই উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর ভবিষ্যদ্বাণী, শিগগির এশিয়ার নতুন বাঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে বাংলাদেশ। মন্তব্য নিতান্তই আবেগে নয়, গবেষণার নিরিখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশিত, গড় আয়ুতে সার্কের অধিকাংশ দেশের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল। পাকিস্তানে গড় আয়ু এখন ২৩.৪ বছর। বিশ্বের সব দেশের তালিকায় ১৬৮ নম্বরে। বাংলাদেশ সেখানে আছে ১৪৮-এ। গড় আয়ু ২৬.৩। একটা প্রধান কারণ অবশ্যই পরিবেশ। গাছপালায় ঢাকা সবুজ দেশটাতে নদীও অনেক। তাতেই দূষণ থেকে দূরে। তার সঙ্গে জুড়েছে বেঁচে থাকার উন্নততর পরিষেবা। চাষবাসে অগ্রণী। মুক্ত আকাশের নীচে মানুষ উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলায়। দীর্ঘজীবী হওয়ার সেটাই বড় উপায়।
পাকিস্তান কোনও কিছুতেই এঁটে উঠতে পারছে না বাংলাদেশের সঙ্গে। ১৯৪৭-এ পাকিস্তানের জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানকে, মানে এখনকার বাংলাদেশকে, বিষ নজরে দেখতেন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা। উন্নয়নের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। শিল্প কারখানা স্থাপন দূরের কথা- ব্যাঙ্ক, বিমা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ও ছিল না পূর্ব পাকিস্তানে। সব সম্পদ শুষে পূর্ব পাকিস্তানকে নিঃস্ব করে রেখেছিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের অনেক কলকারখানা, রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, রেলপথ ধ্বংস করে দিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ সাংসদকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন
সর্বহারা বাংলাদেশ যে, কোনও দিন উঠে দাঁড়াবে ভাবেনি পাকিস্তান। ৪৫ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন পাকিস্তানের নাগালের বাইরে। বাংলাদেশের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি যেখানে ৭.১ শতাংশ, পাকিস্তানের সেখানে মাত্র ৪.৭১ শতাংশ। পোশাক রফতানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। ফেলে আসা অর্থবছরে রফতানি আয়ের ৩৪০০ কোটি ডলারের সিংহভাগ এসেছে পোশাক শিল্প থেকে। বিদেশি মুদ্রার মজুত বেড়ে ৩১০০ কোটি ডলার। সেখানে পাকিস্তানের রিজার্ভ মাত্র ২৩০০ কোটি ডলার। গণতান্ত্রিক বিকাশই বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে মনে করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। যেখানে পাকিস্তান সত্যিই দুর্বল।