এ বছরেও কার্যত ভন্ডুল হতে চলেছে সার্ক সম্মেলন। ভারত আগেই যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থ করেছিল। এ বার বাংলাদেশও ঘরোয়া ভাবে নয়াদিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারাও সার্কে যোগ দিতে পাকিস্তানে যেতে রাজি নয়। এ ব্যাপারে ভারতের পাশেই রয়েছে হাসিনা সরকার।
পাকিস্তানে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঝাঁপিয়েছিলেন, তাঁর দেশে নভেম্বরে নির্ধারিত সার্ক সম্মেলনকে সফল করতে। ভারত যাতে বাদ না সাধে, তার জন্য যাবতীয় কূটনৈতিক কৌশলও তিনি নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেই সূত্রের খবর। কিন্তু সাম্প্রতিক ভারত-পাক সীমান্তে হিংসার জেরে ওই সম্মেলন বয়কট করার সিদ্ধান্তই নিয়েছে ভারত। পাশাপাশি বাংলাদেশও কূটনৈতিক চ্যানেলে নয়াদিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারাও ভারতের পাশেই রয়েছে।
সার্ক-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মামুদ সম্প্রতি পাকিস্তানের নাম না করে জানালেন, ‘‘আমি কোনও ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই। আপনি একটি ঘোড়াকে জলের কাছে নিয়ে যেতে পারেন কিন্তু তাকে জলটা খাইয়ে দিতে পারেন না। তা ছাড়া ভারত, ভুটান বাংলাদেশ এবং নেপাল (বিবিআইএন) যথেষ্ট ভাল কাজ করছে। সম্প্রতি বিমস্টেক-ও সফল ভাবে শীর্ষ সম্মেলন করেছে।’’ সুতরাং পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য গোষ্ঠীগুলিকেই যে গুরুত্ব দিতে চাইছে বাংলাদেশ, বিদেশমন্ত্রীর কথায় সেটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রেও জানানো হয়েছে, সার্ক সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের।
ঢাকার রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, দেশে নির্বাচন কড়া নাড়ছে। এমতাবস্থায় সার্ক-এ যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইসলামাবাদ সফর কার্যত অসম্ভব। প্রথমত তাঁর নিরাপত্তার প্রশ্নটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের যে জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরছে চাইছে আওয়ামি লিগ, তা কার্যত পাকিস্তান-বিরোধী। জামাতের সঙ্গে পাক জঙ্গিগোষ্ঠীর সংযোগ এবং পাক রাষ্ট্রের মদতের প্রশ্নটিও রয়েছে। ফলে ভোটের মুখে ইসলামাবাদে ইমরান খানের পাশে আসন গ্রহণ করাটা ঘরোয়া রাজনীতিতে ভাল বার্তা দেবে না বলেই মনে করছে আওয়ামি লিগ।
ভারতীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে সার্ক বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে নাটকীয় ভাবে নিজের বক্তব্য পেশ করেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। নাম না করে সন্ত্রাসবাদের জনক হিসাবে পাকিস্তানকে আক্রমণও করেছিলেন তিনি। আপাতত পাকিস্তান প্রশ্নে নেপাল যখন বেসুরে বাজছে, বাংলাদেশকে পাশে পাওয়াটা সাউথ ব্লককে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।