Ayub Bachchu

রুপোলি গিটার ছেড়ে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু দীর্ঘ দিন ধরে হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভুগছিলেন।বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়িতেই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর।  সকাল সওয়া ন’টার মধ্যে আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনা হয়, কিন্তু তার আগেই সব শেষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:১৮
Share:

আইউব বাচ্চুর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলাদেশের সংগীত জগত।

কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই বলতে হচ্ছে বিদায়। রুপোলি গিটার ছেড়ে, মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইউব বাচ্চুর চলে যাওযায় নির্বাক বাংলাদেশের সংগীত জগত্। নির্বাক হয়ে গেল তার প্রিয় রুপোলি গিটারও। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হল। গভীর শোক নেমে এসেছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মহলে।

Advertisement

সবার কাছে তার পরিচয় ছিল গিটারের যাদুকর। বাংলাদেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তকে থমকে দিয়ে যেন মনে করিয়ে দিলেন নিজের সেই গান— “এই রুপোলি গিটার ছেড়ে একদিন চলে যাব বহু দূরে...”

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু দীর্ঘ দিন ধরে হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২০০৯ সালে তাঁর হার্টে রিং পরানো হয়েছিল। তাঁর হৃত্ পিণ্ডের কার্যক্ষমতা ছিলো ৩০ শতাংশ। গত সপ্তাহেই তিনি একবার হাসপাতালেই চিকিৎসা করিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়িতেই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। সকাল সওয়া ন’টার মধ্যে আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনা হয়, কিন্তু তার আগেই সব শেষ।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোবাইল নম্বর বন্ধ হবে না, বিবৃতি জারি করে জানাল কেন্দ্র​

আরও পড়ুন: ‘#মিটু’ আন্দোলন চালিয়ে যাব, বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগেও অনড় নন্দিতা

২০১২ সালের নভেম্বরে ফুসফুসে জল জমে হাসপাতালের ভর্তি হয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন গানের জগতে। পারিবারিক সূত্রে খবর— মঙ্গলবার রাতে রংপুরে একটি কনসার্টে গান গেয়ে বুধবার দুপুরে ঢাকাতে আসেন আইয়ুব বাচ্চু।

আরও পড়ুন: আইয়ুব বাচ্চু বনাম জেমস, বাংলা রক ব্যান্ডের উত্থানে চালিকাশক্তি ছিল ওটাই

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি-র দলনেতা ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তাঁর জন্ম চট্টগ্রামে। গানের জীবন শুরু ১৯৭৭ সালে। তাঁর গাওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। ১৯৭৮ সালে প্রথম ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। ১৯৮০ সালে শুরু ‘সোলস’ -এর সাথে। পরবর্তী এক দশক এই ব্যান্ডেই ছিলেন। সোলস ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে নিজে গঠন করেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি (লিটল রিভার ব্যান্ড)। পরে নাম বদলে হয়েছিল লাভ রানস ব্লাইন্ড। এলআরবি নামটা বদলাতে হয়নি।

কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর জীবনাবসানের খবর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মানুষের স্রোত হাসপাতালের সামনে। এই প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

১৯৮৬ সালে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। এর পর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়না (১৯৮৮)। এলআরবি ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ (১৯৯২)। এ ছাড়া তাঁর একক অ্যালবাম-কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি(২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।

এলআরবি-র অ্যালবামগুলো হল এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারী মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২)।

আগামীকাল শুক্রবার জুমা-র নামাজর পর বাংলাদেশের জাতীয় ইদগাহের পাশে হাইকোর্টের মসজিদে আইয়ুব বাচ্চুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেই রাতে তার দুই সন্তান তাজয়াত আইয়ুব ও সাফরা আইয়ুব বাংলাদেশে আসবেন। এর পর মরদেহ নিয়ে মধ্যরাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা। শনিবার চট্টগ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে, তাঁকে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে শেষ বারের মতো শুইয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement