পদ্মা সেতু। ছবি: বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির সৌজন্যে।
চৌকাঠ পেরোচ্ছে বিদায়ী বর্ষ। হিসেব নিকেশে হর্ষ বিষাদ। পাওয়ার মাত্রা বেশি হলেই খুশি। নতুন বছরে আশা রাশি রাশি। বাংলাদেশের প্রাপ্তিতে স্বস্তি। ত্বরাণ্বিত উন্নয়নের গতি। সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ ৪০ শতাংশ শেষ। ভাবা যায়নি এত দ্রুত এগোবে। ৩৬৫ দিনে ১৩ শতাংশ কাজ তুলে ফেলাটা বিস্ময়কর। ১ জুলাই গুলশনে সন্ত্রাসী হামলার পর উন্নয়নের রেখচিত্রটা পাল্টে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। কাজ আটকায়নি একটুও। আগের বছরে পূর্ণ ২৭ শতাংশ। এ বছরে লক্ষ্য মতো কাজ। উন্নয়ন আশাব্যঞ্জক। দু’হাজার সতেরোয় আরও গতি আনার ভাবনা।
পদ্মা সেতুর দুই তীরে মাওয়া-জাজিরা অঞ্চল কর্মচঞ্চল। বিশাল হলুদ লোহার বাক্স পড়ে। দৈর্ঘ ১৫০ মিটার। চার তলা সমান উঁচু। এটা 'স্টিল ট্রাস'। লোকে বলে ‘স্প্যান’। নদীতে পোঁতা স্তম্ভের উপর বসবে ৪১টি স্প্যান। তার ভিতর দিয়ে চলবে ট্রেন। ওপরের কংক্রিটের রাস্তায় ছুটবে গাড়ি। জানুয়ারিতেই চাপবে প্রথম স্প্যানটা। চিনের হোবেই প্রদেশের শিংহোয়াওদাও বন্দর কারখানায় তৈরি স্প্যানের অংশ। সেখান থেকে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামে। বড় জাহাজে মাওয়া যাওয়া যায় না। হাল্কা যানে সেখানে পৌঁছে দেওয়া। তার পর স্প্যানের ৩৪টি অংশ জোড়া লাগান কম কথা নয়। গ্র্যান্ডিং, ওয়েল্ডিং করে স্প্যান সম্পূর্ণ।
সব স্প্যান আকারে সমান নয়। ছোট বড় আছে। আপাতত একটা স্প্যান তৈরি। বাকি দু’টি জোড়া লাগান হচ্ছে। চট্টগ্রামে একটা পড়েছিল। সেটাও তুলে আনা হয়েছে। চিনকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। দেরি হলে হবে না। আরও একটা স্প্যান তৈরি করে পাঠাচ্ছে চিন। স্প্যানের ভার বহনের ক্ষমতা দেখে নেওয়াটা জরুরি। দুর্বল হলে বাতিল। যতটা বইতে পারে তার দেড়গুণ ভার চাপিয়ে দেখা হচ্ছে সইতে পারছে কিনা। অতিরিক্ত চাপে আকার পরিবর্তন হলেও চলবে না। স্প্যানের কাজটা যে কঠিন। ট্রেনের ভার ধরে রাখতে হবে। স্প্যানের ইস্পাত খুব পুরু। ১৬০ মিলিমিটার। কোনও চাপেই ভেঙে পড়ার কথা নয়। তা সত্ত্বেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নেওয়া।
আরও পড়ুন, বিমানের আসনের নীচে ১১ কেজি সোনা
ন যে পিলারের উপর বসবে, তার শক্তি পরীক্ষাও চলছে। মাওয়ার দিকে ৬ আর ৭ নম্বর পিলারের ওপর বসবে প্রথম স্প্যানটা। প্রত্যেক পিলারে চারটে পাইলিং পাইপ কংক্রিটে ঠাসা। জলের নীচে থাকে, দেখা যায় না। গভীরে থেকে পিলার ধরে রাখে। মাটির ১১৭ মিটার নীচে পোঁতা। নরম কাদা মাটি হলে সমস্যা। পাইল ১৮০ মিটার নীচেও নামান হতে পারে। শক্ত বালি বা পাথুরে জমি না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই। ঝুঁকি নেওয়া যায় না। পাইলিং বা কংক্রিট পাইপ গভীরে নামাতে যে হাতুড়ি দরকার সেটাও আনতে হবে।
পদ্মার দুই তীরে বাঁধ দেওয়া চলছে। সেটাই টিকিয়ে রাখবে সেতুটিকে। মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে ১২ কিলোমিটার ব্লক তৈরির কাজ চালাচ্ছে চিনের প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো। কর্মে বিরতি নেই। ঘড়ি ধরে এগোচ্ছে প্রকল্প, সময়ে শেষ করার তাগিদে। পদ্মা সেতুতে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপ বসবে। অপটিক্যাল ফাইবার, টেলিযোগাযোগের জন্য থাকবে ছ’ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ। হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন রাখা হবে। সেতুর ব্যয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ২০১২-তে ১২০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাঙ্ক। কাজ থমকায়নি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায়। প্রকল্প ডানা মেলেছে দেশের অর্থে। ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু তৈরি হয়ে যাবে ২০১৮-তে। দুরন্ত যোগাযোগে বাংলাদেশ হবে আরও গতিশীল।