ফাঁসি বহাল ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ মির কাসেমের

একাত্তরে ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ নামে পরিচিত জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা মির কাসেম আলির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ আপিল বেঞ্চ। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত মার্চেই তাঁকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন মঙ্গলবার খারিজ করে দিল সর্বোচ্চ আদালত।

Advertisement

কুদ্দুস আফ্রাদ

ঢাকা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০২:০২
Share:

একাত্তরে ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ নামে পরিচিত জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা মির কাসেম আলির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ আপিল বেঞ্চ। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত মার্চেই তাঁকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন মঙ্গলবার খারিজ করে দিল সর্বোচ্চ আদালত। এর পরে অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে সাত দিন সময় পাবেন মির কাসেম আলি। তবে ফাঁসির রায় শোনার পরে জামাতের অধিকাংশ নেতাই অপরাধ স্বীকার করতে রাজি হননি। এই রায়ের বিরোধিতা করে বুধবার হরতাল ডেকেছে জামাতে ইসলামি।

Advertisement

সামান্য এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান জামাতের এই ছাত্র নেতার সম্পদের পরিমাণ এখন কম করে ১২ হাজার কোটি টাকা। ইসলামি ব্যাঙ্ক, ইবনে সিনা, দিগন্ত টেলিভিশন, নয়া দিগন্ত সংবাদপত্র-সহ অন্তত একশো বাণিজ্য সংস্থার মালিক মির কাসেম আলি। যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি মার্কিন ল’ফার্মকে তিনি ২৭৫ কোটি টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর ফাঁসির রায় বলবৎ রাখায় মঙ্গলবার আনন্দে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। হয়েছে মিষ্টি বিতরণ। ঢাকাও মেতে উঠেছিল আনন্দ উৎসবে। শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা অঞ্চলের ডালিম হোটেল— মির কাসেম আলির বাহিনী যেখানে দিনের পর দিন অমানুষিক নির্যাতন করে খুন করেছে অজস্র মুক্তিকামী মানুষ ও সংখ্যালঘুকে। এই হোটেলে নির্যাতিতদের সাক্ষ্যই দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পরে ফাঁসির দড়ির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল পাক সেনাদের তৈরি আল বদর বাহিনীর কম্যান্ডার মির কাসেম আলিকে।

পাকিস্তান আমলে চন্দ্রমোহন নাথের তৈরি ‘মহামায়া ভবন’টি দখল করে ডালিম হোটেল পত্তন করেছিলেন জামাতের ছাত্র নেতা মির কাসেম আলি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে এই হোটেলকেই নির্যাতন ও মৃত্যুর কারখানা হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে জানিয়েছেন, হুডখোলা জিপে চড়ে চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়াত কাসেমের সশস্ত্র বাহিনী। তালিকা ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে এনে নগ্ন করে নির্যাতন করা হতো। শেষে তাদের খুন করে দেহ ফেলে দেওয়া হতো জলা-জঙ্গলে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করার ঠিক আগে কাসেম ও তাঁর বাহিনী পালিয়ে গেলে স্থানীয় মানুষ হোটেলটি থেকে বন্দিদের উদ্ধার করেন। চট্টগ্রামে আল শামস ও রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বেও ছিলেন এই কাসেম।

Advertisement

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে গা-ঢাকা দেওয়া মির কাসেম ১৯৭৭-এ ফের প্রকাশ্যে আসেন সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের বদান্যতায়। সৌদি দূতাবাসে চাকরি শুরুর পরে একের পর এক এনজিও খুলে কোটি কোটি ডলার বিদেশি সাহায্য তিনি কামাতে থাকেন বলে অভিযোগ। ১৯৮৩ সালে এরশাদের আমলে ‘ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ’ পত্তন করে শিল্পপতি হয়ে ওঠেন। চিকিৎসা ব্যবসায় নেমে গড়ে তোলেন ইবনে সিনা ট্রাস্ট। গড়ে তোলেন বাংলাদেশের সব চেয়ে আধুনিক ছাপাখানা। একই সঙ্গে জামাতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হন মির কাসেম আলি।

সরকার পক্ষের আইনজীবীদের কথায়, জামাতে ইসলামির বিপুল অর্থের জোগানদার ছিলেন এই নেতা। শুনানি চলার সময়ে দেশের অর্থনীতিতে মির কাসেমের অবদানের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শাস্তি কমানোর আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার বিরোধিতা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন