Bangladesh News

ঢাকা থেকে দেবদাস আসছে দিল্লিতে, অপেক্ষায় গুলজার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ১৯১৭ তে প্রকাশিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’। সাত বছর আগে লিখে ফেলে রেখেছিলেন লেখক। ছাপার যোগ্য মনে করেননি। প্রকাশককে নিরস্ত করেছেন বারবার। তাঁর কথা না রেখেই ছাপা হয় উপন্যাসটি।

Advertisement

অমিত বসু

ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ১২:৪৭
Share:

দেবদাস ছবিতে প্রমথেশ বড়ুয়া ও যমুনা বড়ুয়া।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ১৯১৭ তে প্রকাশিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’। সাত বছর আগে লিখে ফেলে রেখেছিলেন লেখক। ছাপার যোগ্য মনে করেননি। প্রকাশককে নিরস্ত করেছেন বারবার। তাঁর কথা না রেখেই ছাপা হয় উপন্যাসটি। সমালোচক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ‘দেবদাস’ শরৎচন্দ্রের প্রথম বয়সের অপরিপক্ক রচনা বলিয়া নায়কের চরিত্র ও তাহার পদস্থলনের চিত্রে গভীরতার অভাব অনুভূত হয়।’ সেই দেবদাসকেই ভালবেসে ফেলে বাঙালি। ভাষান্তরিত হয়ে ছড়ায় দেশময়। ১৯২৮-এ নরেশ মিত্রের পরিচালনায় দেবদাস ছবি মুক্তি পায়। নির্বাক ছবি। কথা চোখে চোখে। দেবদাস চরিত্রে ফণী বর্মা। চাইলেও সেটা আর দেখা যাবে না। ছবিটা নষ্ট। ১৯৩৫-এ নিউ থিয়েটার্স-এর প্রযোজনায় প্রমথেশ বড়ুয়ার পরিচালনায় প্রথম সবাক ‘দেবদাস’ এর আবির্ভাব। দেবদাস প্রমথেশ স্বয়ং। পার্বতী- যমুনা বড়ুয়া। চন্দ্রমুখী- চন্দ্রাবতী দেবী। পরের বছর হিন্দিতে দেবদাস করেন প্রমথেশ। নায়ক কুন্দনলাল সায়গল, পার্বতী সেই যমুনা বড়ুয়াই। চন্দ্রমুখী- রাজকুমারী দেবী। এক বছর পর ১৯৩৭-এ অসমিয়াতে ফের দেবদাস, প্রমথেশের। দেবদাস- ফণী বর্মা। পার্বতী- জুবেইদা। চন্দ্রমুখী- মোহিনী।

Advertisement

প্রমথেশ বড়ুয়ার তিনটি দেবদাসের মধ্যে একটি বেঁচে ঢাকার মহাফেজখানায়। যত্ন করে রাখা তাঁর বাংলা দেবদাসের সেলুলয়েডের মূল কপি। হিন্দি, অসমিয়ার দেবদাস নিরুদ্দেশ। সন্ধান মেলেনি দীর্ঘ প্রয়াসে। বাংলা দেবদাস বেঁচে থাকায় কিছুটা স্বস্তি। ভারত বাংলাদেশের কাছে মূল কপিটা পাওয়ার আর্জি জানিয়েছিল। ঐতিহাসিক কারণেই সেটা অমূল্য। বাংলাদেশ মূল কপির একটা সিডি দিয়েছিল ভারতকে। তাতে কাজ হয়নি। রেকর্ড রাখতে হলে তা দিয়ে হবে না। বাংলাদেশ গুরুত্ব বুঝে আসলটাই দিতে রাজি। এ বার ঢাকা থেকে দেবদাস পৌঁছবে দিল্লির মহাফেজখানায়।

প্রমথেশ বড়ুয়ার দেবদাসকে ধরেই এগিয়েছিলেন বিমল রায়। হিন্দিতে দেবদাস করিয়েছিলেন দিলীপ কুমারকে দিয়ে। দিলীপ আর দেবদাস একাকার। বারবার দেখার। দেবদাসের প্রেমে ব্যর্থতার হাহাকার তেজ বাড়িয়ে সাইক্লোন। সব রাজ্যের হৃদয়ে দেবদাস। দেবদাসের আত্মপ্রকাশ ১৩টি ভাষায়। উত্তর-দক্ষিণ আর পূর্ব-পশ্চিম ভারতের আকাশে দেবদাস ধ্রুবতারা, পার্বতী পূর্ণিমার চাঁদ। অনেক পরিচালক শেষে দেবদাস-পার্বতীকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। প্রযোজকদের আপত্তিতে পারেননি। তাঁরা বলেছিলেন, ওরা মিললে ছবিটাই শূন্যে মিলোবে। লোকে আর দেখবে না। চিরন্তন বিচ্ছেদেই ছবির আদর। সঞ্জয়লীলা বনশালী, দেবদাস-পার্বতীর মিলনের কথা ভেবেও পিছিয়েছেন। দেবদাস করতে গিয়ে শাহরুখ খানও মিলনান্তক পরিণতিতে রাজি হননি। বলেছিলেন, দেবদাসের ট্র্যাজেডি ছবির সম্পদ। সেটা গেলে, কী রইল!

Advertisement

১৯৭৭-এ অভিনেতা-পরিচালক দিলীপ রায় বাংলায় ‘দেবদাস’ করেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উতরোইনি। পার্বতী চরিত্রে সুমিত্রা মুখার্জিও সুবিচার করতে পারেননি। পরিচালক শক্তি সামন্তের দেবদাসের হদিশ নেই। খোঁজ চলছে। পাঞ্জাবি প্রেমকাহিনী ‘মির্জা’র চিত্রনাট্য লেখার পর গুলজারের মাথায় দেবদাসের ভূত চেপেছে আবার। ‘মির্জা’র নতুন নায়ক নায়িকা, অভিনেতা অনিল কাপুরের পুত্র হর্ষবর্ধন আর সাইয়ামি খেরকে তাঁর পছন্দ। তাঁরা দু’জনে দেবদাস-পার্বতী করতে পারবে বলেই বিশ্বাস। আগে গুলজার দেবদাস নির্মাণে হাত দিয়েই থেমেছিলেন। মাত্র দু’রিল শুট করার পর স্থগিত। দেবদাস হয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। পার্বতী- হেমামালিনী। চন্দ্রমুখী- শর্মিলা ঠাকুর। প্রযোজক ছিলেন অভিনেতা প্রেম চোপড়ার ভাই। গুলজার নতুন করে দেবদাসের চিত্রনাট্য লিখবেন প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’ দেখার পর। আপাতত তিনি ঢাকার দিকে তাকিয়ে। দেবদাসকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

আরও খবর...

দেনার দায়ে বন্ধ বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিটিসেল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন