Bangladesh News

কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি সাবেক পূর্ব-পাকিস্তানের সেই কুখ্যাত গভর্নরের নাতি

১৯৫৮র অক্টোবরে ফিল্ড মার্শাল মহম্মদ আয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থানে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল। ১৯৬২তে সংবিধানে রাষ্ট্রপতি প্রধান ব্যবস্থা চালু করে তিনি রাষ্ট্রপতি।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ১২:৪৮
Share:

আবদুল মোনেম খান।

১৯৫৮র অক্টোবরে ফিল্ড মার্শাল মহম্মদ আয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থানে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল। ১৯৬২তে সংবিধানে রাষ্ট্রপতি প্রধান ব্যবস্থা চালু করে তিনি রাষ্ট্রপতি। সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়ে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান মানে এখনকার বাংলাদেশের দিকে নজর। তাঁর ঘনিষ্ঠ আবদুল মোনেম খান সেখানকার গভর্নর নিযুক্ত। আয়ুব যা বলতেন মোনেম তাই করতেন। আয়ুব চেয়েছিলেন, বাংলা ভাষা সংস্কৃতি মুছে দিতে। বাঙালির জিভে খোদাই করতে উর্দু ভাষা। বিস্মরণে ঠেলতে রবীন্দ্রনাথকে। বিচ্ছিন্নতায় ছিঁড়তে ঢাকা-কলকাতাকে। আয়ুবের অভীষ্ট পূরণে চেষ্টার কসুর করেননি মোনেম। তার মধ্যেই ১৯৬৫তে কচ্ছের রনে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ। ৩০ জুন যুদ্ধ বিরতি। ১৯৬৬তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে আয়ুব খানের তাসখন্দ চুক্তি। পূর্ব পাকিস্তান-পশ্চিমবঙ্গ যোগাযোগ আরও শিথিল। ট্রেন চলাচল বন্ধ। ভিসা ব্যবস্থা কঠোর। সড়ক সীমান্তে যাত্রী, পণ্য পরিবহণ নিয়ন্ত্রিত। মোনেমের দমনপীড়নে সংখ্যালঘুরা দলে দলে দেশত্যাগী। মোনেম ঘোষণা করেন পাকিস্তান হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান। এখানে বিধর্মীদের ঠাঁই নেই। আতঙ্কের মেঘ উড়িয়ে গর্জে ওঠে বাঙালি। ১৯৭১এ বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধ রুখতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মোনেম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয় করে তোলেন। উদ্দেশ্য সফল হয় নি। একাত্তরের অক্টোবরে ঢাকার বনানীর বাসভবনে মুক্তি বাহিনীর গুলিতে তিনি নিহত হন।

Advertisement

৪৫ বছর পর তাঁর পৌত্র আকিফুজ্জামান খানেরও মৃত্যু একই ভাবে। ঢাকার কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় বাংলাদেশ নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ছিন্নভিন্ন তার দেহ। আট সঙ্গীরও সেই পরিণতি। তারা জামাতুল মুজাহিদিনের উগ্রপন্থী। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ ছিল নিবিড়। আকিফুজ্জামানের জন্ম পিতামহের মৃত্যুর ২১ বছর পর ১৯৯২তে। মাত্র চব্বিশেই শেষ। বড় রকমের জঙ্গি হানার ছক ছিল। মৃত্যু তার আগেই। পিতামহ মোনেম খানের সান্নিধ্য না পেলেও তাঁর ভাবনার উত্তরাধিকার পেয়েছে বাবার কাছে। মোনেমের আদর্শে মৌলবাদের তাড়নায় জঙ্গিপনায় রপ্ত হয়েছিল। বিভ্রান্তি সংশোধনের সব রাস্তাই বন্ধ করেছিল স্বেচ্ছায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা কঠোর জানা ছিল না আকিফুজ্জামানের। দেশ জুড়ে কোনায় কোনায় চলছে অভিযান। হাজার হাজার সন্ত্রাসী গ্রেফতার। জঙ্গিদের হাল হকিকৎ ক্রমশ স্পষ্ট। নাশকতায় পার পাবে না কেউ। ঠিক একই ভাবে ১৯৭১এ নকশালদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। একাত্তরে বাংলাদেশ যখন মুক্তি যুদ্ধে উত্তাল, পশ্চিমবঙ্গে তখন নকশাল সন্ত্রাস। সে বছর জুলাইতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতেই অতি গোপনে সেনা-পুলিশ সহযোগে, ‘অপারেশন স্টিপলচেজ’ চালানোর নির্দেশ দেন ইন্দিরা। এই অপারেশনে অসংখ্য নকশাল কর্মী-নেতা নিহত হয়। জেলে যায় ২০ হাজার নকশালপন্থী। তারপরই সব ঠান্ডা, কলকাতা আতঙ্ক মুক্ত। বাংলাদেশের মানুষকেও সন্ত্রাসভীতি থেকে মুক্ত করতে চান হাসিনা। তাঁর অপারেশন অব্যাহত। পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান। রেহাই নেই সন্ত্রাসীদের।

Advertisement

১ জুলাই গুলশন ঘটনার মূল চক্রীকে চিহ্নিত করা গেছে। নাম তামিম আহমেদ চৌধুরী। জন্ম বাংলাদেশে হলেও থাকত কানাডায়। যাতায়াত দু’দেশেই। জেএমবি-কে অর্থ-অস্ত্র যোগায়। চাপে পড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকে ধরতে বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কে ইমাম-সহ দুই বাংলোদেশিকে গুলি করে খুন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন