গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না, খোঁপার কাঁটায় বলছেন বাংলাদেশের মেয়েরা

খোঁপার কাঁটাকে যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে বার্তা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের এক নবীন ডিজাইনার।

Advertisement

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:২৬
Share:

খোঁপার গোলাপ দিয়ে কাছে ডাকা অনেক হয়েছে। এ বার দূরে যেতে বলারও পালা। খোঁপার কাঁটাকে যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে বার্তা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের এক নবীন ডিজাইনার। তাঁর তৈরি খোঁপার কাঁটায় লেখা থাকছে, ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না।’

Advertisement

রাস্তাঘাটে বাসে-ট্রামে মেয়েদের যে ভাবে নিত্য হয়রানির মুখে পড়তে হয়, তার বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার জন্যই এই অভিনব ভাবনা। সেখানে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, ‘হোক প্রতিবাদ খোঁপার কাঁটায়’। টিশার্টে নানা ধরনের বার্তা লেখার যে জনপ্রিয় রেওয়াজ আছে, সেটা এ বার উঠে আসছে গয়নাতেও।

২৮ বছরের জিনাত জাহান নিশা ঢাকায় থাকেন। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-এর চারুকলা অনুষদ থেকে চিত্রকলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। সঙ্গে তিন ভাইবোন— বিজু, জিসা আর শুভকে নিয়ে খুলে ফেলেছেন অনলাইন ফ্যাশন বিপণি। ফ্যাশনের সঙ্গে প্রতিবাদের যোগসূত্র ঘটানোর চিন্তাটা কী ভাবে এল? নিশা বললেন, ‘‘রাস্তাঘাটে মেয়েদের হয়রানির সঙ্গে আমরা যেন অভ্যস্তই হয়ে গিয়েছি। বাসে-ট্রেনে বহু বার অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমি নিজেও হয়েছি। তারই প্রতিবাদ তুলে ধরতে চেয়েছি খোঁপার কাঁটায়।’’ এর আগেও ‘থামুন’ লেখা আংটি, দুল, পেনড্যান্ট বানিয়েছিলেন নিশারা। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আরও কাজ করতে আগ্রহী ওঁরা।

Advertisement

এ পারে কলকাতার অলঙ্কারশিল্পী অদিতি চক্রবর্তীও মনে করছেন, শিল্পসম্মত ভাবে ডিজাইন করতে পারলে এই ধরনের গয়না যথেষ্ট জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অদিতি মূলত ‘এথনিক’ ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। অতি সম্প্রতি তাঁর কাছেও একজন একটি খোঁপার কাঁটা চেয়েছেন, যাতে লেখা থাকবে ‘একটু সরে দাঁড়ান’। অদিতি এখন সেটা ডিজাইন করছেন।

কিন্তু গয়না কি সমাজের মন বদলাতে পারে? নিশা বলছেন, ‘‘খোঁপার কাঁটায় লিখেই সব সমস্যা মিটে যাবে না। কিন্তু প্রথম এবং শেষ কথা হচ্ছে, আওয়াজ তোলা।’’ ইতিমধ্যেই প্রচুর সাড়া মিলেছে। ফেসবুক পেজে জমে উঠেছে তর্কবিতর্ক। হিজাব পিন-এ প্রতিবাদী বার্তা লেখার অনুরোধও এসেছে। নিশা বলছেন, ‘‘হাতে এঁকে এই কাজটা সময়সাপেক্ষ। ফলে প্রচুর অর্ডার পেয়েও আমরা অনেককেই না বলে দিচ্ছি বা সময় চেয়ে নিচ্ছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল, ফ্যাশন যে সচেতনতার বোধও জাগাতে পারে, এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়া।’’ একমত অদিতিও। তিনি আরও যোগ করছেন, ‘‘মেয়েদের অনেকেই সব সময় গলা তুলে প্রতিবাদ জানাতে পারেন না। এই জাতীয় গয়না তাঁদেরও সাহায্য করবে। মুখে না বলেও অনেক কথা বলা হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন