সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মানবসেবায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে চিকিৎসকদের কাজ করার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এর ১৩তম সমাবর্তনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “এক জন ডাক্তারের ওষুধের থেকে মুখের কথায় অর্ধেক অসুখ ভাল হয়ে যায়।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁদের জীবনে এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, “আপনারা একটি মহৎ পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে যাচ্ছেন। মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে মানুষের কল্যাণে আপনারা কাজ করবেন।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা ডাক্তার। আপনাদের মন হতে হবে, অনেক উদার। আপনাদের মন হবে সেবার। আপনাদের কাছে বড়-ছোট থাকবে না। আপনাদের কাছে (বিবেচ্য) থাকবে রোগ। কার রোগ কত বেশি, কার রোগ কম। তা হলেই তো সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে এবং মানুষের মনে আপনাদের জন্য সহযোগিতা বাড়বে।’ ” বঙ্গবন্ধুর সেই কথা ‘স্মরণ রাখার’ আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব থেকে মেধাবী যাঁরা, তাঁরাই তো মেডিক্যাল পড়তে যায়। মেধাবীরা তাঁদের মেধা দিয়ে, আমরা দেশকে কী ভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব, সেই সহযোগিতা করবেন।”
জনসংখ্যার তুলনায় দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা কম— এই প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সে তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অত্যন্ত কম, নার্সের সংখ্যা আরও কম। এ রকম একটা পরিবেশে মন-মানসিকতা ঠিক রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া... প্রচণ্ড একটা চাপ থাকে, সেটা আমরা বুঝতে পারি। তার পরও চিকিৎসকেরা তাঁদের মানবিক গুণাবলী দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারবেন বলে আশা করি।”
বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু রাজধানীতে নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতেও স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করা হবে। তার পর জেলায় চলে যেতে হবে। আমাদের জনসংখ্যাটা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।”
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে গত সাত বছরে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ এবং নার্সদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহম্মদ নাসিম। এ ছাড়া বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-এর প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক এস এ এম গোলাম কিবরিয়া, কলেজের সভাপতি অধ্যাপক মহম্মদ সানোয়ার হোসেন, কলেজের সহ-সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম-বেশি প্রতি ছ’হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ‘মেয়েরা হেঁটে গিয়ে’ চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারে। এ ছাড়া আমাদের সেনাবাহিনীর যে ডিভিশনগুলো আছে, আমি নির্দেশ দিয়েছি, সেখানে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ এবং নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।”
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ফেলোদের হাতে সনদ ও সোনার পদক তুলে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরির জন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।