বাংলাদেশের ঘুমন্ত আশুগঞ্জ বন্দর জেগেছে কাজের জোয়ারে। নিরুত্তাপ সময় কাটিয়ে সক্রিয় হওয়ার সংযোগ। ভিড়েছে বন্ধু ভারতের জাহাজ এমভি নিউটেক-৬। নোঙর করার অনেক আগেই কাউন্টডাউন শুরু। কলকাতা বন্দর ছেড়ে বরিশাল টার্মিনাল ছুঁয়ে চাঁদপুর। তারপর মেঘনাঘাট হয়ে ১৬ জুন আশুগঞ্জ বন্দর। বাংলাদেশের জলপথে স্থায়ী ট্রানজিট পোল ভারত। মৈত্রীর ঐতিহাসিক অধ্যায়। ২০১৫তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে নৌ-ট্রানজিট চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সেই সূত্রেই শুরু হল যাত্রা।
তিন বছর আগে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জে যায় একটি জাহাজ। সেটা ছিল পরীক্ষামূলক। জাহাজে ছিল বিশাল লোহার চালান। পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ। ১০ হাজার টন চাল। বন্ধুত্বের খাতিরে কোনও মাশুল নেয়নি বাংলাদেশ। এবার চলাচল নিয়মিত হলেও বিনামূল্যে নয়। যাতে দু’পক্ষই লাভবান হয় সেদিকে নজর। ট্রানজিট পেয়ে যেমন ভারতের অর্থ আর সময় দুই-ই বাঁচবে, বাংলাদেশ পাবে উপযুক্ত মাশুল। আর অন্যান্য চার্জ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক বিস্তারের সুযোগ বাড়বে।
আশুগঞ্জে পৌঁছনো কলকাতার জাহাজটিতে রয়েছে এক হাজার টন স্টিলশিট। মাশুল টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা। শুল্ক বিভাগ পাবে ১৩০টাকা। সড়ক দফতরকে দিতে হবে ৫২ টাকা। বাকি ১০ টাকা যাবে বিআইডব্লিউটির হাতে। পণ্যের নিরাপত্তা চাইলে প্রতি টনে ৫০ টাকা এসকর্ট ফি গুনতে হবে। নৌ প্রোটোকলের নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য চার্জও দেওয়া দরকার। বার্থিং, লেবার হ্যান্ডলিং, ল্যান্ডিং, পাইলটেজ, কনজারভেন্সি চার্জও বাদ যাবে না। এ সব থেকে বাংলাদেশ পাবে টন প্রতি আরও একশো থেকে দেড়শো টাকা। তার চেয়ে বড় কথা, বন্দর কর্মীদের কাজের সময় গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে হবে না। খালাসিরাও সুখের দিন দেখবেন।
মালপত্র খালাস হলে ট্রাকে করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সড়ক পথে পৌঁছবে ত্রিপুরার আগরতলায়। সেখানকার ওয়্যারহাউসে পণ্য তুলে দিয়ে তবে নিশ্চিন্ত। এ সব কাজ বাংলাদেশের। তাদের ৬০টি ট্রাক পণ্য পৌঁছনোর দায়িত্ব নেবে। ওঠা নামানোর কাজ বাংলাদেশের কুলি মজুরদের। বাংলাদেশের ট্রাক ড্রাইভাররা স্টিয়ারিং ধরলে পৌঁছতে কতক্ষণ। আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা মাত্র ৫১ কিলোমিটার।
অসুবিধে একটাই। রাস্তাটা ভাল নয়। ভারী পণ্য পরিবহণে একেবারেই অনুপযুক্ত। তার বিহিত দরকার। আশুগঞ্জ বন্দরের অবস্থাও সঙ্গীন। চট্টগ্রাম, মংলা বন্দরের মতো বেশি জাহাজ আশা যাওয়া করে না বলে অবহেলায় পড়ে আছে। সংস্কারের জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। সে টাকা এখনও পৌঁছায়নি।
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ভারতের মধ্যে সড়ক ট্রানজিট চালু হওয়ার কথা ছিল অনেক আগেই। ভুটানের সংসদে অনুমোদন পায়নি বলে স্থগিত। জুলাইতে সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা। পেলে চার দেশের মধ্যে যান চলাচল অবাধ হবে। বাণিজ্য বাড়বে, সম্পর্ক নিবিড় হবে। সড়ক ট্রানজিটে পাকিস্তানেরও আসার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে তারা বেঁকে বসেছে। তাদের মাথায় এখন শুধু চিন। চিনের সঙ্গে নৌ ট্রানজিট পাকা। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ পথ প্রশস্ত হওয়ায় চিনও সন্তুষ্ট। আর চিন খুশি থাকলে পাকিস্তানের আর কী চাই!