International

পায়রা বন্দর দিয়েই উন্নয়নের ঢেউ আসছে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ বাংলাদেশে

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এত দিনের অভিজ্ঞতা বলতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাকাল হওয়া। পূর্ব পশ্চিম উত্তরের তরতরিয়ে এগোনটা দেখে যাওয়া। রাস্তাঘাটের দুর্দশা। গ্যাস পেতেও হতাশা। বিদ্যুতের দুরবস্থা। কিছুতেই আস্থা নেই, সবেতেই অনাস্থা। না পেয়ে পেয়ে চাইতেও অনীহা।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৫:১১
Share:

উন্নয়নের জোয়ার আসছে পায়রা বন্দর দিয়ে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এত দিনের অভিজ্ঞতা বলতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাকাল হওয়া। পূর্ব পশ্চিম উত্তরের তরতরিয়ে এগোনটা দেখে যাওয়া। রাস্তাঘাটের দুর্দশা। গ্যাস পেতেও হতাশা। বিদ্যুতের দুরবস্থা। কিছুতেই আস্থা নেই, সবেতেই অনাস্থা। না পেয়ে পেয়ে চাইতেও অনীহা। এমনি করে দিন যায় কখনও! দহনে কেবলই অভিমান। এ বার দক্ষিণের বন্ধ দরজায় আঘাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। খুললেন সিংহদুয়ার। বওয়ালেন উন্নয়নের বাতাস। উদ্বোধন বাংলাদেশের তৃতীয় বন্দরের। নাম দিলেন পায়রা। জানালেন, পায়রা শান্তির প্রতীক। তাই এই নাম। কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ চ্যানেলে আলোর রোশনাই। প্রথম নোঙর চিনের জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ডের। এনেছে ৫৩ হাজার টন পাথর। পদ্মা সেতু, রেল লাইন নির্মাণে লাগবে। প্রস্তরের ভার তো কম নয়। ক্রেনে তুলে ট্রাক বোঝাই করে, জায়গা মতো নিয়ে যেতেও সময় লাগে। পাথর দেখতে উপচে পড়া ভিড়। জাহাজটাও বিশাল। যেখানে নৌকা ছাড়া কিছুই ঠেকত না, সেখানে দৈত্যাকার অর্ণব। কৌতুক বিস্ময়ের সঙ্গে উন্মাদনা। হবে নাই বা কেন। বড় কিছু দেখাটা যে অভ্যেসের বাইরে।

Advertisement

বন্দরটা চিন প্রথম চিনলেও দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশেরই অচেনা থাকবে না। একে একে সব দেশ এসে মিশবে এই বন্দরে। দেয়ানেয়া চলবে অনিমেষে। বাংলাদেশের পণ্য বিদেশে যাবে, ভিনদেশি পণ্য বাংলাদেশে আসবে। সার্কে বাণিজ্য বিস্তারের নতুন অধ্যায়। এখন গভীর না হলেও ধীরে ধীরে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত হবে। এ বন্দর ব্যবহারে ভারতও আগ্রহী। হাসিনার আপত্তি নেই। সবচেয়ে উৎসাহী শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের চালের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে। জাহাজ বোঝাই চাল কবে পায়রা বন্দর ছেড়ে কলম্বো অভিমুখে যাত্রা করবে তারই প্রতীক্ষা।

পাশের পায়রা নদীটার পোয়াবারো। আগে চোখেই পড়ত না। এবার পড়বে। বন্দরের দরকারেই নদীতে ড্রেজিং না করলে চলবে না। গভীর নদী আপন বেগে আত্মহারা হবে। বন্যার শঙ্কা যাবে। হাসিনা জানিয়েছেন- বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রেহাই পাবে দক্ষিণাঞ্চল, বন্দরের দৌলতেই। ভাগ্য ফিরবে। গোটা অঞ্চল আঞ্চলিকতার খোলস ছেড়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে। এখানেই জাহাজ নির্মাণ আর পুননির্মাণ শিল্প গড়ে উঠবে। পাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের মর্যাদা। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বরিশাল পর্যন্ত চলবে রেল। হবে নৌবাহিনীর ঘাঁটি, সেনানিবাস। অসমের করিমগঞ্জও নৌ-পরিবহণের আওতায় আসবে।

Advertisement

হাসিনার ১০টি প্রধান প্রকল্পের মধ্যে পায়রা বন্দর অন্যতম। পদ্মা সেতুর মতই এটা গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটা হয়ে গেলে বন্দরের তাৎপর্য আরও বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। পায়রা বন্দরের সঙ্গেই চালু যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর আট লেন সড়ক, যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে মাওয়া-পদ্মা সেতু হয়ে, মাদারীপুরের পাঁচ্চর আর ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চার লেন এক্সপ্রেস মহাসড়ক। রাস্তা আরও হবে। ব্যস্ত সরু রাস্তা চওড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে। যোগাযোগ সুগম না হলে উন্নয়ন যে থমকাবে। ছয়টি উপজেলায় একশো ভাগ বিদ্যুতায়ন সমাপ্ত করে হাসিনা জানিয়েছেন, সারা দেশে ৭৮ ভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ। বাকিটা করতে সময় লাগবে না। শিল্পায়নের সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়ার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নেও জোর। সব স্কুলেই বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিতে কম্পিউটার ল্যাব চালু হচ্ছে। কোনও কিছুতেই যেন পিছিয়ে পড়তে না হয়।

আরও পড়ুন:
দুরন্ত বাসে কলকাতা-খুলনা এ বার মাত্র চার ঘণ্টায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন