COVID19

Lockdown: ফের লকডাউন হয়তো আর নয়, ইঙ্গিত মোদীর

গত দু’বছরে একাধিক লকডাউনের সাক্ষী থেকেছে দেশ। বিশেষ করে প্রথম দফার লকডাউনের পরে দেশের অর্থনীতি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৩
Share:

কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ফের দেশ জুড়ে সার্বিক লকডাউনের কথা ভাবা হচ্ছে না বলে আজ ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে রণকৌশল নির্ধারণের সময়ে মাথায় রাখতে হবে আর্থিক কর্মকাণ্ড যাতে কোনও ভাবেই বাধা না পায়। দেখতে হবে সেই সিদ্ধান্ত যেন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব না ফেলে। সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের পরিবর্তে তাই কনটেনমেন্ট জ়োন গড়ে বেশি সংখ্যক পরীক্ষা করার উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

গত দু’বছরে একাধিক লকডাউনের সাক্ষী থেকেছে দেশ। বিশেষ করে প্রথম দফার লকডাউনের পরে দেশের অর্থনীতি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। কিন্তু দেশ জুড়ে লকডাউনের ফলে সংক্রমণ যে একেবারে শূন্যে এসে ঠেকেছিল, তা-ও নয়। উপরন্তু লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় বহু কলকারখানা, ছোট শিল্প। চাকরি হারান কয়েক লক্ষ মানুষ। জীবিকা হারিয়ে কপদর্কশূন্য হয়ে অন্য রাজ্য থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে ঘরে ফিরে আসতে হয়েছিল লক্ষ-লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাই দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের সময় থেকেই সার্বিক লকডাউন ডাকা থেকে পিছিয়ে আসে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ যখন গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তখন আজ দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির উপরাজ্যপালদের সঙ্গে বৈঠকে দেশ জুড়ে লকডাউন ডাকার সম্ভাবনা কার্যত খারিজ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। উপরন্তু রণকৌশল ঠিক করার প্রশ্নে রাজ্যগুলি কোনও ভাবেই যেন সার্বিক লকডাউনের পথে না হাঁটে, সে বিষয়ে আজ বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, “আর্থিক কর্মকাণ্ড যাতে বাধা না পায় সে দিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। রণকৌশল ঠিক করার আগে মাথায় রাখতে হবে যে সেই পদক্ষপে যাতে সাধারণ মানুষের জীবিকার ন্যূনতম ক্ষতিসাধন না হয়।” আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংক্রমণের সময়ে আম আদমির জীবন ও জীবিক নিশ্চিত করার উপরে জোর দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সব রাজ্যের জন্য কোভিড প্যাকেজ ও রেশনের মাধ্যমে খাদ্যের নিশ্চয়তা দাবি করেন।

সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের বিকল্প হিসাবে স্থানীয় পর্যায়ে কনটেনমেন্ট জ়োন গড়া ও বেশি সংখ্যক পরীক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওমিক্রন প্রজাতিতে সংক্রমিত অধিকাংশ ব্যক্তি যে হেতু বাড়িতেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, সে জন্য বিচ্ছিন্নবাসের নিয়মে পরিবর্তন এনে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার উপরে এ যাত্রায় জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আজ প্রধানমন্ত্রীও বিচ্ছিন্নবাসে থেকে চিকিৎসার সওয়াল করে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, বিচ্ছিন্নবাসের মাধ্যমে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া। তবে সে ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নবাসের নিয়ম যাতে কড়া ভাবে পালন করা হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।” বিচ্ছিন্নবাসে যারা রয়েছেন তাদের জন্য প্রতিটি রাজ্যকে সুষ্ঠু টেলি-মেডিসিন পরিষেবা গড়ে তোলার প্রশ্নেও সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বিচ্ছিন্নবাসে সংক্রমিতরা সুস্থ হয়ে উঠলে হাসপাতালগুলির উপরেও চাপ কম পড়বে।

Advertisement

গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের শীর্ষে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাসাগরে স্নানের কারণে রাজ্যের সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। আজ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসন্ন উৎসবের দিনগুলির কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে কী ভাবে তা মোকাবিলা করার প্রশ্নে রাজ্য প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে তাও বিস্তারিত ভাবে বৈঠকে জানান তিনি। তবে কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, সংক্রমণ বাড়ছে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ-সহ ভোটমুখী সব রাজ্যে। সংক্রমণের এই দিনগুলিতে তাই যথাসম্ভব কোভিড-বিধি মেনে চলার উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গোড়া থেকেই বিজ্ঞানীরা সাবধান করে আসছিলেন যে ওমিক্রন করোনার অন্য প্রজাতি থেকে অনেক দ্রুত ছড়ায়। আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অতীতের অন্য প্রজাতিগুলির চেয়ে ওমিক্রন অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। কিন্তু কোনও ভাবেই আতঙ্ক যাতে না ছড়ায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।” এ দেশে এখন পর্যন্ত ৯২ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ় ও ৭০ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন। টিকাকরণ ১০০ শতাংশ করার লক্ষ্যে সরকার ‘হর ঘর দস্তক’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশে করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে রাজ্যগুলির জন্য ২৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংক্রমণকে হারাতে আমাদের করোনার সমস্ত প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ওমিক্রন মোকাবিলা করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সংক্রমণের যে প্রজাতি হানা দিতে চলেছে তাদের বিরুদ্ধে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন