ফাইল চিত্র।
গ্রিক পুরাণে বৈরিতা আর ঈর্ষার দেবতা জেলাস। বন্ধন ভাঙেন নিমেষে। দ্বন্দ্বের টানাপড়েনে উত্তেজনা বাড়ান। বিদ্বেষে দেশে দেশে মৈত্রী শেষ। ১৫ অক্টোবর গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে তেমনটাই হওয়ার আশঙ্কা ছিল। ব্রিকসের পাঁচটি দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকার সংহতি বজায় রাখাটা সহজ ছিল না। অলক্ষ্যে থেকে দেবতা জেলাস সেই চেষ্টা করে ছিলেন কি না জানা নেই। করলেও সফল হননি। হয়েছে বরং উল্টোটা। ব্রিকসের সঙ্গে জুড়েছে ‘বিমস্টেক’ এর চারটি দেশ বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড। ভারতও সঙ্গে। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃপ্ত উচ্চারণ প্রমাণ করেছে বাঙালির দৃঢ়তা। সন্ত্রাসমুক্ত দেশ চান তিনি। উন্নয়নের পরিপন্থী শক্তিকে বরদাস্ত না করার অঙ্গীকার। একই ভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদী। পাকিস্তানের নাম না করেও তাদের সন্ত্রাসের মাদার-শিপ বা সন্ত্রাসের ধাত্রীভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিন-রাশিয়া তাতে প্রত্যক্ষ সমর্থন না জানালেও বিরোধিতা করেনি।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বাংলাদেশ, ভারত, চিনের প্রায় সমানে সমান। সাত থেকে সাড়ে সাত শতাংশ। বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে বাংলাদেশের ছবিটা উজ্জ্বলতর। ব্রিকসের জন্ম ২০০৯-এ। তখনও জ্বলে ওঠেনি বাংলাদেশ। ২০০৬ থেকে ঘোরতর সমস্যায়। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা। ২০০৭-এর ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি। ১২ জানুয়ারি তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফকরুদ্দিন আহমেদ। ২২ জানুয়ারি নির্বাচন স্থগিত। এক বছর ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বহু প্রতীক্ষিত অষ্টম সাধারণ নির্বাচন ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর। বিপুল ভোটে জিতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে সময় তো লাগবেই। শান্তি ফিরতেই উন্নয়নের রানওয়েতে দৌড়। টেক অফ ২০১৪-র ৫ জানুয়ারি নবম সাধারণ নির্বাচনে হাসিনার জয়ের পর। প্রত্যয়ী হাসিনা আর পিছন ফিরে তাকাননি। দেশের চেহারাটা দ্রুত বদলেছে। শিল্প, কৃষির প্রসার। উৎপাদনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রফতানি দ্বিগুণ। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৬.৫ থেকে ৭ শতাংশে পৌঁছতেই বিস্মিত বিশ্ব। অগ্রগতি কল্পনার চেয়ে বেশি। ব্রিকসের আবির্ভাব-মুহুর্তে বাংলাদেশের এই ছবিটা ফুটলে, সংগঠনে তাদের স্থান অবশ্যম্ভাবী ছিল। বর্তমানে বিমস্টেক আর ব্রিকস একসূত্রে বাঁধা পড়েছে। বাংলাদেশের মর্যাদার আসন পাকা।
২০০১-এ অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিনের গবেষণায় ব্রিক শব্দটি উঠে আসে। বলা হয়, বিশ্বে জি-৭ গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ জানাবে ‘ব্রিক’। ২০০৯-এর ১৬ জুন ব্রিকের চার দেশের প্রথম সম্মেলন। ২০১১তে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকে যোগ দেওয়ায় ব্রিকের সঙ্গে সাউথ আফ্রিকার ‘এস’টা যুক্ত হয়। ব্রিকের জায়গায় ব্রিকস। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ব্রিকসের যৌথ অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর অর্থনীতিকে ছাপিয়ে যাবে ২০৫০-এ।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাসচালককে পুড়িয়ে মারল যাত্রী