সালাউদ্দিন আহমেদ
নির্বাচনের সুরই বিএনপি-র অন্যতম শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠে।
খালেদা জিয়ার প্রাক্তন সহকারী ও বিগত বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোট সরকারের এই মন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন করতেই হবে শেখ হাসিনার সরকারকে এবং সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতায় ক্ষমতা দখল করবে বিরোধীরা।
বেআইনি আনুপ্রবেশের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে সালাউদ্দিনকে শুক্রবার দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছে শিলংয়ের একটি আদালত। এর পরে আনন্দবাজারকে তিনি জানান, রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেলেই ঢাকায় ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে, যার অনেকটাই তাঁর হাতে নেই। কিন্তু অবিলম্বে তিনি দেশে ফিরতে চান। বলেন, ‘‘ফিরলে গ্রেফতার হতে পারি। কিন্তু সে ঝুঁকি নিতে আমি তৈরি। কারণ সেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই শুরু করেছেন। শীঘ্রই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে এই জোট।’’
সালাউদ্দিন এখনও বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য। বাংলাদেশে তাঁর দল ২০১৪-র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ বার নির্বাচনের মুখে কয়েকটি নাম-সর্বস্ব বিরোধী দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ তৈরি করলেও নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায়। কারণ, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ না-ছাড়লে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকদের একটা বড় অংশ মনে করেন— ভোটে জিতে সরকার গড়ার পরিস্থিতি যখন নেই, তখন ভোটে না-লড়াই ভাল। কারণ, বিএনপি ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে তা বানচালের কর্মসূচি নিলে ১০% ভোটও পড়বে না। তখন পরের সরকারকেও ‘অবৈধ সরকার’ বলা যাবে। বলা যাবে সিংহ ভাগ
মানুষ তাঁদের ভোট বয়কটের ডাক সমর্থন করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে বছর তিনেক ভারতে আটকে থাকা সালাউদ্দিন চৌধুরীর গলায় নির্বাচনের সুর কি দলের কৌশলের বিপরীতে যাচ্ছে না? মানতে নারাজ কক্সবাজারের এই প্রাক্তন সাংসদ। বলেন, ‘‘দল তো বলেছে ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হলে তারা অংশ নেবে। ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনে যে চাপ তৈরি হবে, তাতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে, অন্য শর্ত পূরণ করে অবাধ ভোটের ব্যবস্থা করতেই হবে। তখন তো নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। আর ঢাকায় স্বৈরাচারের পতন সময়ের অপেক্ষা।’’
সালাউদ্দিনের মুক্তির জন্য দিল্লিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি বলেছেন, ‘‘স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ।’’ সালাউদ্দিনের মুক্তিকে রিজভি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের জয় বলে বর্ণনা করলেও, দলের নেতাদের একাংশ কিন্তু সন্দিগ্ধ। তাঁরা মনে করছেন, ভোটের মুখে সালাউদ্দিনের মুক্তি বিএনপিকে দুর্বল করার নতুন চালও হতে পারে।
তিন বছর আগে ঢাকায় উত্তরার একটি বাড়ি থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে কিছু লোক সালাউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মাস দুয়েক পরে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে মেঘালয়ের শিলংয়ে পাওয়া যায়। পাসপোর্ট-ভিসা না মেলায় বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু কী ভাবে তিনি শিলংয়ে এসে পৌঁছলেন?
আপাতত সে প্রসঙ্গে একটি কথাও না-বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সালাউদ্দিন।