খালেদার একার লড়াই, পুত্রের সঙ্গে, নিজের সঙ্গেও

সঞ্জয় গাঁধীকে নিয়ে এক সময় বেশ বেকায়দা বা অস্বস্তিতে পড়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতা হারানোর জন্য কি মনে মনে সঞ্জয়কেই দুষতেন তিনি? আজ আর এসব প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ১৬:১৬
Share:

সঞ্জয় গাঁধীকে নিয়ে এক সময় বেশ বেকায়দা বা অস্বস্তিতে পড়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতা হারানোর জন্য কি মনে মনে সঞ্জয়কেই দুষতেন তিনি? আজ আর এসব প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। তবে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোথাও না কোথাও হয়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক পরিক্রমাতেও তেমন একটা আঁচ পাওয়া যায়। দু’দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে তিনি ব্যতিব্যস্ত। সামলাতে নাজেহাল। বাংলাদেশকে চারটে জোনে ভাগ করে তারেক তাঁর পছন্দের যুব নেতৃত্বের হাতে সাংগঠনিক দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। অসহায় দর্শকের ভূমিকা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার। বাইরের বিরোধিতা সামাল দেওয়ার চেয়ে ঢের বেশি কঠিন ঘরের দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করা।

Advertisement

২০০৯ সালে আর্থিক অনিয়মে তারেক লন্ডনে নির্বাসিত হওয়ার পর নিস্তার পেয়েছিলেন খালেদা। যদিও দলটা ততদিনে হাড়গোড় ভাঙা ‘দ’ হয়ে গিয়েছিল। তাকে টেনে তোলাটা যে কতটা কঠিন এবং জটিল খালেদা তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন। তিনি হাল ছাড়েননি। অসুস্থ শরীরেও যতটা পারছেন, সামাল দিচ্ছেন দলটাকে। তারেক কিন্তু মায়ের হাতে সব দায়িত্ব ছেড়ে বসে থাকতে নারাজ। রিমোট কনট্রোলে দলটার কর্তৃত্ব রাখতে তাঁর চেষ্টার ত্রুটি নেই। ফোনে যোগাযোগ রাখছেন তাঁর কাছের নেতাদের সঙ্গে।

আপাতত দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ স্তিমিত। ষষ্ঠ জাতীয় কউন্সিল গঠনের পর তারেক লক্ষ্য করেছেন, তাঁর কোনও ইচ্ছেরই মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। তিনি দলের গঠনতন্ত্রের সংশোধন চেয়েছিলেন। দলে কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টির দাবি ছিল তাঁর। ভেবেছিলেন সেই পদে তাঁর লোক থাকলে খালেদার ক্ষমতা খর্ব হবে। তিনি নেপথ্যে থেকে ছড়ি ঘোরাতে পারবেন। সেটা হয়নি, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর অধিকারও সঙ্কুচিত। উপদেষ্টা পরিষদে তিনি যুক্ত থাকতে পারছেন না।

Advertisement

ক্ষুব্ধ তারেক নিজেকে অনেকটা সরিয়ে নিয়েছেন। তাতে অসুবিধেও হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না। স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, নির্বাহী কমিটির অনেক পদ শূন্যই রয়েছে। খালেদা নিজে পুত্র তারেকের সঙ্গে কথা বলতে চান না। বরং তারেক কন্যাকে তিনি খুবই ভালবাসেন। যথেষ্ট আদরে তাকে আগলে রেখেছেন। খালেদার স্বপ্ন, নাতনিই একদিন দলের হাল ধরবে। কিন্তু সে তো অনেক দিনের ব্যাপার। তার বড় হতে আরও সময় লাগবে। আপাতত তারেকের কাছে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে চাইছেন খালেদা। যার কাজ হবে রফা করা। দলের উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে তারেক যদি কোনও নাম সুপারিশ করে সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। খালেদা ধরেই নিয়েছেন, বিএনপির হাল তাঁকেই শক্ত হাতে ধরে রাখতে হবে। নিঃসঙ্গ যাত্রায় এটা তাঁর একার লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন