—প্রতীকী চিত্র।
গত জুলাইয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক রাজ্যসভায় জানিয়েছিল, ২০১১ থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬৬৮৮টি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে গিয়েছে। মঙ্গলবার একই ধরনের প্রশ্নে মন্ত্রক জানাল, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটা বেড়েছে আরও ২০৭টি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই পরিসংখ্যান চিন্তার। কারণ খতিয়ে দেখা উচিত রাজ্যের। শিল্পের একাংশের দাবি, সমস্যা একাধিক— রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে অস্পষ্ট জমিনীতি, শিল্পের জন্য উৎসাহ ভাতা না থাকা, জমি-বিদ্যুতের চড়া মাসুল, শ্রমিক-জটিলতা এবং সামগ্রিক নেতিবাচক পরিবেশ। কেউ কেউ বলছেন, শুধু চলে যেতে দেখা যাচ্ছে। নতুন সংস্থা আসছে কি না, জানাক রাজ্য। প্রশাসনের কারও সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্পোন্নয়ন নিগমের ভাইস চেয়ারম্যান জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য স্পষ্ট নয়। উদ্যোগ এত সহজে বন্ধ করা যায় না। তা হলে সেখানকার কর্মী, জমি, সম্পত্তির কী হল? এটা পরিকল্পিত বাধা। কেন্দ্রই বলেছে ক্ষুদ্র শিল্পে রাজ্য দেশে প্রথম সারিতে। মহিলা পরিচালিত সংস্থায় শীর্ষে।’’
অর্থনীতিবিদ এবং বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী বলেন, ‘‘আশা করব, যে তৃণমূল উন্নয়নের কথা বলে, তারা জানাবে এই সময়ে নতুন ক’টা শিল্প রাজ্যে এসেছে।’’ বণিকসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন লগ্নি করব? গুজরাতের গিফ্ট সিটি কিংবা মহারাষ্ট্রে যে সুবিধা সরকারের থেকে মেলে, তা এখানে নেই। রয়েছে শুধু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। জমির চড়া দাম। বিদ্যুতের মাসুলও শিল্পবান্ধব নয়। ফলে বাইরে চলে যাওয়াই শ্রেয়।’’ ওই কর্তা সম্প্রতি রাজ্যের বাইরে উৎপাদন কেন্দ্র খুলেছেন। জয়প্রকাশের অবশ্য দাবি, রাজ্য থেকে সরে যাওয়া মানে কী, কেন্দ্র স্পষ্ট জানাক। না হলে কিছু প্রমাণ হয় না।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশন্স-এর অধ্যাপক অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, সংস্থার রাজ্য ছাড়ার কারণ শিল্পবান্ধব পরিবেশের অভাব। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি। ওড়িশা, ছত্তীসগঢ় বা অসমে শিল্প পরিকাঠামোর উন্নতি। তবে অশোকের মতে, কেন্দ্রের তথ্য বলছে গড়ে মাসে ৩৫টি সংস্থা বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের রেজিস্টার্ড অফিস সরছে, নাকি কারখানা, তা দেখতে হবে। বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মণীশ ঝাঝারিয়ার কথায়, ‘‘এই সব সংস্থার মধ্যে ক’টি ভুয়ো, সেটাও প্রশ্ন।’’ সূত্রের খবর, সম্প্রতি অন্য রাজ্যে কারখানা খুলেছে এখানকার একটি হোসিয়ারি ও ভোগ্যপণ্য সংস্থা। জয়প্রকাশ অবশ্য বলছেন, ‘‘কেন্দ্রের বাধা সত্ত্বেও ক্ষুদ্রশিল্পে প্রথম দুয়ের মধ্যে থাকা প্রমাণ করে রাজ্য কোন দিকে এগোচ্ছে।কেন্দ্রই এই তকমা দিয়েছে।’’
কেন্দ্রের তথ্য
গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে ২০৭টি সংস্থা রাজ্য ছেড়েছে।
২০১১-১২ অর্থবর্ষ থেকে ধরলে সংখ্যাটা ৬৮৯৫।
এর মধ্যে ৪৪৮ সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত।
গত মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংস্থা সরেছে মহারাষ্ট্রে, ১৩০৮টি। তার পরে দিল্লি (১২৯৭), উত্তরপ্রদেশ (৮৭৯)।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে