নোট বাতিলের তিন মাসেও অটুট বৃদ্ধির হার। অক্টোবর-ডিসেম্বরে তা দাঁড়িয়েছে ৭%। এই পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের বিঁধছেন নরেন্দ্র মোদী। কটাক্ষ করেছেন হার্ভাড-অক্সফোর্ডের ডিগ্রিকে। এমনকী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকেও এক হাত নিতে ছাড়েননি। শুক্রবার সেই বৃদ্ধির অঙ্কেই মোদীকে পাল্টা জবাব দিল পি চিদম্বরম ও মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার জুটি। তাঁদের দাবি, বৃদ্ধির হার চাঙ্গা থাকা আসলে অঙ্কের কারসাজি। প্রধানমন্ত্রী যা-ই দাবি করুন, গত এক বছর ধরে বৃদ্ধির হার আসলে ক্রমশ কমছে। নোটবন্দির জেরে আগামী দিনে তা আরও নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের যুক্তি, নোট বাতিলের পরেও বৃদ্ধিকে চাঙ্গা দেখাচ্ছে জিডিপি মাপার পদ্ধতি বদলে যাওয়ার কারণে। এখন প্রথমে মাপা হয় যে, অর্থনীতিতে নতুন করে মোট মূল্য যোগ হল কতখানি (গ্রস ভ্যালু অ্যাডিশন বা জিভিএ)। দেশে আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে কি না, তা বোঝার এটিই আসল সূচক। এর সঙ্গে আদায় হওয়া কর যোগ করে ও ভর্তুকি বাদ দিয়ে জিডিপি মেলে। আর দু’টি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জিডিপি বাড়ার হারই হল আর্থিক বৃদ্ধি। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালের জানুয়ারি-মার্চ, এপ্রিল-জুন, জুলাই-সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-ডিসেম্বরে জিভিএ বেড়েছে যথাক্রমে ৭.৪২%, ৬.৯০%, ৬.৬৯% ও ৬.৬১% হারে। অর্থাৎ, ক্রমশ শ্লথ হয়েছে ওই হার। তাঁর ইঙ্গিত, কর আদায় বেশি হওয়ায় তা যোগ করে জিডিপির ভাল ছবি তুলে ধরছে কেন্দ্র।
চিদম্বরমের মতে, নোট নাকচের জেরে সে ভাবে ধাক্কা লাগেনি শুধু সরকারি ব্যয়, কৃষি উৎপাদন ও বিদ্যুৎ -গ্যাস-পুর পরিষেবায়। কিন্তু এই তিন ক্ষেত্রকে সরিয়ে নিলে দেখা যাচ্ছে যে, আরও বেশি গোত্তা খেয়েছে বৃদ্ধি।
মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টি সি এ অনন্ত আগেই বলেছেন, ‘‘নোটবন্দির প্রভাব মাপতে আরও তথ্য জরুরি।’’ সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে যোজনা কমিশনের প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান অহলুওয়ালিয়া বলেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের উপর নোটবন্দির ধাক্কা পরিসংখ্যানে ধরা পড়েনি। অথচ সেখানেই ওই আঘাত সবচেয়ে বেশি। জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিক ও আগামী আর্থিক বছরে সম্ভবত সেই প্রভাব পুরোদস্তুর টের পাওয়া যাবে।