নতুন বছরে ধাক্কা সুদ নির্ভর প্রকল্পে

চঞ্চল বাজারে চাই বাড়তি সচেতনতা

নবীন-প্রবীণ সবাই টাকা রাখতে পারেন এই প্রকল্পে। তবে বন্ডটির মেয়াদও ৬ বছর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ বছর। ভারত সরকারের এই সেভিংস বন্ড ‘আরবিআই বন্ড’ নামেও খ্যাত। ২০০৩ সালে ছাড়ার পরে এই প্রথম সুদ কমানো হল এই বন্ডে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

সুদ নির্ভর মানুষের জন্য আবারও ধাক্কা নতুন বছরে।

Advertisement

বছরের প্রথম দিন থেকেই সুদ কমেছিল বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে। সুদ নির্ভর মানুষের জন্য আরও একটি ধাক্কা এল, যখন ভারত সরকারের ৮% (করযোগ্য) বন্ড প্রকল্পটি বন্ধ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল সরকারের তরফে। এটি ছিল উঁচু হারে টাকা রাখার একটি অন্যতম নির্ভরযোগ্য জায়গা। পরে অবশ্য মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হন, যখন মঙ্গলবার সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, ৮% প্রকল্পটি বন্ধ হলেও তার জায়গায় আসছে ৭.৭৫ শতাংশের প্রকল্প। সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমলেও তা বর্তমানে চালু ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় ১.২৫ বেসিস পয়েন্ট বেশি। নবীন-প্রবীণ সবাই টাকা রাখতে পারেন এই প্রকল্পে। তবে বন্ডটির মেয়াদও ৬ বছর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ বছর। ভারত সরকারের এই সেভিংস বন্ড ‘আরবিআই বন্ড’ নামেও খ্যাত। ২০০৩ সালে ছাড়ার পরে এই প্রথম সুদ কমানো হল এই বন্ডে।

গত সপ্তাহে বাজারের কাছে বড় খবর ছিল, নভেম্বরে আটটি মূল পরিকাঠামো শিল্পের ৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। গত ১৩ মাসে এটিই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিয়েছে ইস্পাত ও সিমেন্ট, যা বেড়েছে যথাক্রমে ১৬.৬% এবং ১৭.৩% হারে। নভেম্বরে আটটি পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন এতটা বাড়লেও এপ্রিল থেকে নভেম্বরে এই সব শিল্পে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩.৯%, যা আগের বছরের একই সময়ের বৃদ্ধির তুলনায় বেশ খানিকটা (৫.৩%) কম। তবে বছরের বাকি ৪ মাসে নভেম্বরের বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলে গড় হার বেড়ে উঠতে পারে। এটা সত্যি হলে তা অবশ্যই বাজারকে শক্তি জোগাবে।

Advertisement

বাজারের জন্য আর একটি ভাল খবর হল, ঋণে স্টেট ব্যাঙ্কের সুদ হ্রাস। বেস রেট এবং বেঞ্চমার্ক প্রাইম লেন্ডিং রেট ৩০ বেসিস পয়েন্ট করে কমানোর কথা ঘোষণা করে এসবিআই। এতে উপকৃত হবেন কমবেশি ৮০ লক্ষ ঋণগ্রহীতা। এই সুদ ছাঁটাইয়ের পরে এসবিআইয়ের বেস রেট কমে দাঁড়াল ৮.৬৫%। নতুন সুদের হার চালু হয়েছে বছরের প্রথম দিন থেকেই।

তবে কেন্দ্রের তরফে চলতি ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের জন্য আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার জের সোমবার পড়তে পারে বাজারে। নোটবন্দির ধাক্কার পরেও গত এপ্রিলে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি ছিল, ৭.৫ শতাংশে পৌঁছে যাবে বৃদ্ধির হার। এ বার তা সত্যি সত্যি ৬.৫ শতাংশে নেমে এলে সেটাই হবে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গত চার বছরে সব থেকে কম। পরিসংখ্যান দফতরের তথ্য থেকে স্পষ্ট, এই অর্থবর্ষে চোখে পড়ার মতো ধাক্কা খেয়েছে কৃষি, কল-কারখানায় উৎপাদন।

শঙ্কার মেঘ


বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়া


উত্তর কোরিয়ার হুমকি নিয়ে বিশ্ব বাজারে আতঙ্ক


কেন্দ্রীয় সরকারের রাজকোষ ঘাটতি বাড়া, যার জেরে বাজেটে নতুন কর চাপার আশঙ্কা


চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি বৃদ্ধি


শেয়ার বিক্রি করে হাতে পাওয়া মূলধনী লাভের উপর বাজেটে কর বসার আশঙ্কা


পণ্যমূল্য চড়ার কারণে আরও কমলো সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা


মার্কিন মুলুকে ফের সুদের হার বৃদ্ধির ইঙ্গিত

এ দিকে ডিসেম্বরে প্রায় ৫,৯০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজার রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে মূলত মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ইকুইটি খাতে একনাগাড়ে মোটা লগ্নির কারণে। ২০১৭ সালে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি শেয়ার বাজারে লগ্নি করেছে কমবেশি ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। এর আগের বছর তা ছিল ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

২০১৭ সাল অত্যন্ত ভাল কেটেছে ইকুইটিতে লগ্নির দিক থেকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই দৌড় বজায় থাকতে পারে চলতি বছরেও। কেউ কেউ বছর শেষে নিফ্‌টিকে ১২,৫০০ পয়েন্টে দেখতে পাচ্ছেন। তবে সুরক্ষার ব্যাপারে যাঁরা সচেতন, এই বাজারেও তাঁদের বুঝেশুনে পা ফেলা উচিত। যে সব সমস্যা দুই সূচককে মাঝেমধ্যেই টেনে নামাতে পারে, তা দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।

অর্থাৎ উত্থানের মধ্যেও চলতি বছরে মাঝেমধ্যে আমরা সংশোধনের কবলে পড়তে দেখব সূচককে। উত্থান যেমন সুযোগ দেবে লাভ ঘরে তোলার, তেমনই আবার প্রতিটি পতনে কম দামে কেনা যেতে পারে অভীষ্ট শেয়ার। চঞ্চল বাজারে লগ্নিকারীদের একটু সজাগ থাকতে হবে। সদ্ব্যবহার করতে হবে প্রত্যেকটি সুযোগের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন