জিএসটি নিয়ে আর্জি শিল্পের

দোহাই, বন্ধ করুন কাদা ছোড়াছুড়ি

দয়া করে ইতিবাচক রাজনীতি করুন। বন্ধ করুন এই কাদা ছোড়াছুড়ি। শনিবার একই মঞ্চে একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিরোধী পক্ষকে এই বার্তাই দিল পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল ফের আটকে যাওয়ায় তিতিবিরক্ত শিল্পমহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

ফিকি-র সভায় অর্থমন্ত্রী। সঙ্গে বণিকসভাটির নতুন প্রেসিডেন্ট হর্ষবর্ধন নেওটিয়া (ডান দিকে)। এ দিনই জোৎস্না সুরির (বাঁ দিকে) হাত থেকে ওই দায়িত্ব নিয়েছেন অম্বুজা-নেওটিয়া গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। ছবি: পিটিআই

দয়া করে ইতিবাচক রাজনীতি করুন। বন্ধ করুন এই কাদা ছোড়াছুড়ি। শনিবার একই মঞ্চে একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিরোধী পক্ষকে এই বার্তাই দিল পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল ফের আটকে যাওয়ায় তিতিবিরক্ত শিল্পমহল। বারবার নিস্ফলা রাজনীতির ফাঁসে ওই বিলের তীরে এসে তরী ডোবা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিল তারা।

Advertisement

এ দিন শিল্পমহলের এই ক্ষোভের আঁচ অবশ্য কংগ্রেসের গায়েই লেগেছে বেশি। ফিকি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে বণিকসভাটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আপনাদের সময়ে জিএসটি চালু হয়নি বলে এখন তাতে বাধা দিচ্ছেন আপনারা। বিরোধী দলকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ছেড়ে গঠনমূলক রাজনীতি করতে হবে।’’ একই সঙ্গে সুরির দাবি, তিনি শুধু বিরোধী দলকে দুষছেন না। সরকারকেও বলছেন কাদা ছোড়াছুড়ি ছেড়ে ইতিবাচক রাজনীতি করতে।

সুরির বক্তব্যের সঙ্গে একমত শিল্পমহল। তাদের অভিযোগ, বিজেপি ও কংগ্রেস— দুই শিবিরই রাজনৈতিক অঙ্ক কষছে। ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির। এমনকী এই অনুষ্ঠানেও যে ভাবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও শর্মা বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়েছেন, তাতে শিল্পমহল শঙ্কিত। তাঁরা মনে করছেন, রাজনৈতিক তরজা যে ভাবে চলছে, তাতে জিএসটি তো দূর অস্ত্‌, পাশ করা কঠিন হবে যে কোনও বিলই।

Advertisement

জেটলি বলেছেন, কংগ্রেসের দাবি মেনে জিএসটি চালু হলে, তাতে ত্রুটি থেকে যাবে। তার থেকে দেরিতে তা চালু হওয়া ভাল। কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি, সরকারই জিএসটি চালু করতে প্রস্তুত নয়। দোষ চাপাচ্ছে বিরোধীদের ঘাড়ে। শর্মা বলেন, ‘‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এলেও ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা সম্ভব নয়।’’

সনিয়া-রাহুলের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে এ দিন এমনিতেই দিল্লির রাজনৈতিক আবহ উত্তপ্ত ছিল। তার মধ্যে সকালে ফিকি-র সভায় আসেন জেটলি। কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘কিছু লোক অর্থনীতির গতি শ্লথ করে দিয়ে আনন্দ পায়।’’ তারপরে শিল্পপতিদের বলেন, ‘‘কংগ্রেস বলছে, জিএসটি ভাল, আমরাই এনেছিলাম, কিন্ত....এই কিন্তুই হল বিপজ্জনক। আপনারা কিন্তু-ওয়ালাদের ছাড়বেন না।’’ এখানে এলে জবাব চাইবেন।’’

এরপরেই ফিকি-র মঞ্চে হাজির হন শর্মা। বলেন, ‘‘জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলের কথা হচ্ছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী কি আপনাদের বলেছেন যে, ওই সমস্ত বিল এখনও তৈরিই হয়নি? কোথায় বিলের খসড়া? আমাদের দোষ দিচ্ছে। নিজেরা কি ১ এপ্রিল থেকে চালু করতে তৈরি?’’

শুক্রবারই চলতি বছরে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৮.৫% থেকে ৭.৫ শতাংশে নামিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। রফতানিতে টান, পরপর দু’বছর অনাবৃষ্টি এবং বেসরকারি লগ্নির অভাব এর কারণ বলে জেটলির যুক্তি। কিন্তু তাঁর দাবি, জিএসটি চালু হলে, এই হার ২% পর্যন্ত বেশি হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধিতার জেরেই তা হচ্ছে না।

শর্মার পাল্টা অভিযোগ, মোদী সরকার অর্থনীতি চালাতেই পারেনি। এমন ভাব করছে, যেন জিএসটি-ই সব রোগের ওষুধ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অর্থনীতি কি শুধু জিএসটি বিলের উপরেই দাঁড়িয়ে? মোদী-জেটলি কথা দিতে পারবেন যে, জিএসটি এলেই বৃদ্ধি ১১ শতাংশে চলে যাবে?’’ তাঁর অভিযোগ, বৃদ্ধির হার হিসেবের পদ্ধতি বদলেছে। কিন্তু ওই হার আদপে বদলায়নি। শিল্পমহলের অভিযোগের জবাবেও তাঁর যু্ক্তি, ‘‘গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জিএসটি বিরোধিতার শাস্তি কি আপনারা মোদীকে দিয়েছেন?’’

জেটলির দাবি, কংগ্রেসের আপত্তি নেহাতই জিএসটি আটকানোর ছুতো। কিন্তু কংগ্রেসের যুক্তি, শিল্পোন্নত রাজ্যের জন্য ১% বাড়তি কর, জিএসটি ১৮ শতাংশে বেঁধে রাখা ইত্যাদি দাবি যুক্তিসঙ্গত। জেটলি বলেন, সংবিধানে জিএসটির হার বেঁধে দিলে, তা গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু শর্মার যুক্তি, এক সময় এই সরকারের তরফেই বার্তা মিলছিল যে, জিএসটি ২৩% হতে পারে। তাঁর দাবি, কথা বলতে তাঁরা তৈরি। কিন্তু তার জন্য সরকারকে দম্ভ ছাড়তে হবে। বিরোধীদের অপমান করা চলবে না।

সব দেখে জিএসটি বিল পাশের আশা এ দিন আরও ফিকে মনে হয়েছে শিল্পমহলের। গাঢ় হয়েছে আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন