অ্যামাজন কর্তা জেফ বেজোস।
ছোট্ট একটা ই-মেল এ বার অনলাইন বাজার বনাম ইট-কাঠ পাথরের দোকানপাটের নতুন লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু।
চলতি মাসে ভারতের লক্ষ লক্ষ ক্রেতার কাছে পৌঁছেছে অ্যামাজনের প্রধান জেফ বেজোসের সই করা একটি ই-মেল। সঙ্গে একটি ২০০ টাকার ভাউচার। আর এই নজিরবিহীন বিপণন কৌশলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (আরএআই)। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ অ্যামাজন।
আরএআই-এর প্রধান কুমার রাজাগোপালনের অভিযোগ, বৈষম্যমূলক আইনের বলি হচ্ছে খুচরো ব্যবসা। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশি পুঁজির দৌলতে ভারতে অনলাইন কেনাকাটার বাজারে ছাড়ের রমরমা। যে-সুবিধা সাধারণ বিপণির নেই। কারণ ‘রিটেল’ বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি পাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ ই-কমার্সের মোড়কে রিটেল ব্যবসাই করছে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট থেকে শুরু করে ছোট-বড় অনলাইন বিক্রেতা।’’ যারা ক্রেতা টানতে ছাড়ের অঙ্ক লাফিয়ে বাড়াতে দ্বিধা করেনি।
ইট-কাঠ পাথরের দোকানের বিক্রি নিজেদের দিকে টানতে প্রথমে শুরু হয়েছিল ছাড়ের ধারাবাহিকতা। আর অনলাইন দুনিয়ার সেই লাগামছাড়া ছাড়ে বিপদ-ঘণ্টি শুনেছে ‘অফলাইন’ বা সাধারণ দোকানপাট। তা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে লাগাতার দরবারও করেছে তারা। রাজাগোপালন জানান, কেন্দ্রকে তাঁরা দফায় দফায় বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ই-টেল ও রিটেলের মধ্যে এমনিতে এখন আর ফারাক নেই। তবে এই অনলাইন ও অফলাইনের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে দিচ্ছে অর্থের জোগান।
আর এই ছাড়ের পরিমাণ কোন মাত্রায় পৌঁছেছে, তা বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থার ব্যালান্স শিটই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। ২০১৫ সালের মার্চের শেষে ফ্লিপকার্টের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৯০০ কোটি টাকার একটু বেশি। ২০১৪ সালে তা ছিল ৭১৫ কোটি। অথচ গত বছরের তুলনায় তাদের ব্যবসা বেড়েছে চার গুণ। অ্যামাজনের ছবিও একই রকম ফিকে। মার্কিন শেয়ার বাজার ন্যাসডাকে প্রায় ৬৭০ ডলার যার শেয়ার দর, সেই অ্যামাজন গোষ্ঠীর ভারতীয় শাখার লোকসান ২০১৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৩২০ কোটি টাকার বেশি, গত বছরেও যা ছিল ২৪. ৬ কোটি। একই হাল আর এক দেশি সংস্থা স্ন্যাপডিলের। ব্যবসা কয়েক গুণ বাড়িয়েও লোকসানের পরিমাণ কমাতে পারেনি সংস্থা। গত বছরের তুলনায় তা বেড়ে গিয়েছে পাঁচ গুণ । আপাতত সেই
অঙ্ক ১৩৫০ কোটি টাকা।
এই তথ্য পরিসংখ্যানের প্রসঙ্গ টেনে আরএআই-এর দাবি, অধিকাংশ অনলাইন সংস্থাই লোকসানে চলছে। তারা যে-পরিমাণ ছাড় দিচ্ছে ক্রেতাদের, ব্যবসায় লাভের পরিমাণের সঙ্গে তার সঙ্গতি নেই।
অন্য দিকে সাধারণ দোকানের জায়গার দাম কমছে না, তার ভাড়াও চড়া। অনলাইন সংস্থার মতো প্রায় কর্মীহীন হয়ে কোনও দোকান চালানো সম্ভব নয়। কর্মীদের বেতন, দোকানের ভাড়া ও বিপণনের টাকা গুনতে গুনতে লাভ প্রায় তলানিতে ঠেকছে বলে দাবি আরএআই-এর।
গত কয়েক বছর ধরেই রিটেল বা খুচরো বাজারের ক্রেতা ভিড় জমাচ্ছেন নেট-বাজারে। যানজট-ভিড় ঠেলে দোকানে দোকানে না-ঘুরে ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দায় জিনিসের দাম যাচাই করে কেনাকাটা সারছেন অনেকেই। বিশেষত নতুন প্রজন্ম এই ‘হাই-টেক’ বাজারেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তথ্য পরিসংখ্যানও তাই বলছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা ফরেস্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৪৫০% বিক্রি বাড়িয়েছে নেট-বাজার।
শুধুই বিক্রি বৃদ্ধি নয়। নেট-বাজারের বিক্রির টাকার পরিমাণও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আগে অনলাইন বাজারের রমরমা বই, সিডি, ট্রেন-প্লেনের টিকেট বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন বাড়ি-গাড়ি কিনতেও এই বাজারে ঢুকে পড়ছেন ক্রেতা। রিটেল উপদেষ্টা সংস্থা টেকনোপ্যাকের দাবি, আগামী ২০২০ সালে ভারতে অনলাইন বিক্রির পরিমাণ ৩২০০ মার্কিন ডলার ছুঁয়ে ফেলবে।
নেট-বাজারের এই রকেট গতিতে উত্থানের পাশাপাশি রয়েছে সাধারণ দোকানের মলিন ছবি। ছোট-বড় মিলিয়ে দেশের ৬০ লক্ষ দোকানের বিক্রি কমেছে। আরএআই-এর মতে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে গত নভেম্বর মাসে দিল্লি হাইকোর্ট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে ২১টি ই-কমার্স সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সংস্থাগুলি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আইন অমান্য করেছে কি না, তাও দেখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জার্মানিতে অ্যামাজনের গুদামে ধর্মঘট
সংবাদ সংস্থা
মার্কিন বহুজাতিক অ্যামাজনের জার্মানির ৬টি গুদামের কর্মীরা ধর্মঘটে নামলেন সোমবার থেকে। চলবে বড়দিনের আগে (২৪শে) পর্যন্ত। জার্মানির মোট ৯টি গুদামে নিজস্ব কর্মী সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। উপরন্তু রয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি ঠিকা-কর্মী। কর্মী ইউনিয়ন ‘ভার্দি’-র তরফে জানানো হয়েছে মূলত খুচরো বিপণন শিল্পের সমান হারে বেতনের দাবিতেই এই ধর্মঘট। অ্যামাজন কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, এঁদের পণ্য পরিবহণ কর্মী হিসেবেই গণ্য করে সংস্থা। তাঁর দাবি, বেতন কাঠামোও ওই শিল্পের গড় বেতনের চেয়ে বেশি। তা ছাড়া, সামান্য সংখ্যক কর্মী ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন, ফলে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে না।