কম দামি আবাসনের মাথায় এ বার পরিকাঠামোর তকমা

একটি তকমার জোরেই এ বার কিস্তিমাত করল আবাসন শিল্প।কম দামি আবাসন বা ‘অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং’ এ বার পেল পরিকাঠামোর তকমা। ২০১৭ সালের বাজেট পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, এ ধরনের আবাসনে লগ্নি টানতে চায় সরকার।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

একটি তকমার জোরেই এ বার কিস্তিমাত করল আবাসন শিল্প।

Advertisement

কম দামি আবাসন বা ‘অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং’ এ বার পেল পরিকাঠামোর তকমা। ২০১৭ সালের বাজেট পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, এ ধরনের আবাসনে লগ্নি টানতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্য পূরণ করতেই এ ধরনের প্রকল্পগুলি পরিকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হবে। সঙ্গে পাওয়া যাবে পরিকাঠামো শিল্পের জন্য বরাদ্দ সুযোগ-সুবিধা।

নোট সঙ্কট। মন্দার জুজু। জাতীয় আয়ের নিম্নমুখী গড়। পর পর ধাক্কায় গত কয়েক বছরে এই শিল্পের গড় বৃদ্ধি কিছুতেই প্রত্যাশিত অঙ্ক ছুঁয়ে উঠতে পারছে না। আবাসন শিল্পকে সেই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দিতে মোদী সরকারের ২০১৭-’১৮ সালের বাজেট কম দামি আবাসন প্রকল্পকেই বাজি ধরেছে। বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ, দু’দিকেই গতি আনতে ক্রেতা ও নির্মাণ সংস্থা, দু’পক্ষের জন্যই রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।

Advertisement

নতুন এই প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ সুবিধা নির্মাণ সংস্থারা পাবে। প্রথমেই উঠে আসছে ঋণ পাওয়ার সুবিধা। পরিকাঠামো শিল্পে কম সুদে ঋণ পাওয়া যায়। এ বার সেই সুবিধা আবাসনও পাবে। এত দিন ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা আবাসনকে সহজে ঋণ দিত না। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল চড়া ঝুঁকির পরিমাণ। নয়া তকমা সেই ঝুঁকি দূর করবে অনেকটাই। এ ছাড়াও এ বার বাজেটে আর্থিক সংস্থাদের বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছে। পরিকাঠামো শিল্প হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ফলে আবাসন শিল্প আর্থিক সংস্থাদের বিনিয়োগ টানবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর সঙ্গে রয়েছে আয়করে ছাড়ের সুবিধা। কম দামি আবাসন তৈরি করলে ৮১ বি ধারায় কর ছাড় পাওয়া যাবে।

আর এই তকমার সুবিধা পরোক্ষ ভাবে পাবেন ক্রেতারাও। কারণ সরকারি সুযোগ-সুবিধার টানে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আবাসন বেশি সংখ্যায় তৈরি হবে বলে দাবি নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই-এর। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের মাথার উপরে ছাদ জোটানো আগের তুলনায় সহজ হবে। ক্রেডাই বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট সুশীল মোহতার দাবি, এই তকমা গোটা আবাসন শিল্পের জন্য হয়ে উঠতে পারে ‘গেম চেঞ্জার’। তিনি বলেন, ‘‘আবাসন শিল্পের মুখই বদলে যাবে। কারণ এই তকমার দৌলতে সহজে কম সুদের ঋণ পাবে প্রকল্পের নির্মাতা। পাওয়া যাবে করছাড়ের সুবিধাও।’’

তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি স্বস্তির হাওয়া এনে দিয়েছে, তা হল পরিকাঠামো শিল্পের তকমার কারণে দ্রুত ছাড়পত্র পাওয়ার সুবিধা। বিজিএ রিয়্যালটির কর্ণধার রাজীব ঘোষ জানান, জমি কেনার পরে প্রকল্প চালু করতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। কারণ বিভিন্ন সরকারি ছাড়পত্র পেতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে যায়। সঙ্গে বেড়ে যায় প্রকল্প তৈরির খরচ। পরিকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ফলে অন্তত ১০ শতাংশ খরচ বাঁচবে বলে আবাসন শিল্পের দাবি।

লাভের গুড় দ্রুত ঘরে তোলার টানে যে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়বে, তা জানান জৈন গোষ্ঠীর ঋষি জৈন ও টাটা হাউসিং-এর ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের মতে, কম দামি আবাসনের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ কম থাকে। সহজ ঋণ ও আয়করে ছাড় পাওয়ার জোড়া উপহার সেই কম লাভ পুষিয়ে দেবে। এ বারের বাজেটে বলা হয়েছে এ ধরনের প্রকল্প তৈরি করলে পাওয়া যাবে আয় করে ছাড়।

শুধুই করছাড় ও আর্থিক সুবিধা নয়। বিশেষজ্ঞ সংস্থা কেপিএমজি ইন্ডিয়ার নীরজ বনশলের মতে, পরিকাঠামো তকমার দৌলতে কম দামি আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি পাওয়াও সহজ হতে পারে। তিনি বলেন,‘‘ বড় বড় শহরে এ ধরনের প্রকল্প তৈরি করার জন্য সরকার জমি পাওয়ার ব্যবস্থাও করতে পারে।’’

নোটের আকালে আবাসন শিল্প নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বাজারকেই বাজি ধরেছিল। কারণ গত তিন মাসে হুড়মুড়িয়ে পড়েছে ফ্ল্যাটের বিক্রি। দেশ জুড়ে ৪৪ শতাংশ বিক্রি কমেছে। আঁচ লেগেছে কলকাতার বাজারেও। তবে অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতার ছবি কিছুটা কম মলিন। দিল্লিতে কমেছে ৫৩ শতাংশ বিক্রি। মুম্বই ৫০ শতাংশ, বেঙ্গালুরু ৪৫ শতাংশ, আমদাবাদ ৪৩ শতাংশ, হায়দরাবাদ ৪০ শতাংশ, পুণে ও চেন্নাই যথাক্রমে ৩৫ ও ৩১ শতাংশ। কলকাতায় ২০ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে বাজেটে ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা যে আবাসন শিল্পে চাহিদা তৈরি করবে, তা নিয়ে নিঃসংশয় শিল্পমহল। বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ স্যমন্তক দাসের মতে, এক কামরা ও দু’ কামরার ফ্ল্যাটের জন্য নতুন শ্রেণির ক্রেতা তৈরি হবে। ন্যূনতম আয়কর দশ শতাংশ থেকে নামিয়ে পাঁচ শতাংশে আনা হয়েছে। হাতের এই বাড়তি টাকায় বেশি মাসিক কিস্তি দেওয়ার সাহস করতে পারবেন কম দামি আবাসনের ক্রেতারা। চার বড় শহরে ৩০ বর্গ ফুট ও অন্যান্য শহরে ৬০ বর্গ ফুট ‘বিল্ট আপ’ জায়গার ফ্ল্যাট কম দামি আবাসন হিসেবে বিবেচিত হয়। এ বার বাজেটে সেই বিল্ট আপ এরিয়ার বদলে কার্পেট এরিয়া ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ একই টাকায় আদতে বেশি জায়গা পাবেন ক্রেতারা।

এ বার বাজেটে নতুন ফ্ল্যাটের পাশাপাশি পুরনো ফ্ল্যাট বিক্রি করার ক্ষেত্রেও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ‘রিসেল’ বা দ্বিতীয় বার বিক্রির বাজার নোট সঙ্কটে মার খেয়েছে। সেই বাজার তুলতে বাজেটে নতুন নিয়ম ঘোষণা করা হয়েছে। এত দিন ফ্ল্যাট কিনে তা তিন বছর পরে বিক্রি করলে মূলধনী লাভকরে সুবিধা পাওয়া যেত। এই বাজেট সেই সময়সীমা দু’বছরে নামিয়ে এনেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন