জট বহাল পণ্য-পরিষেবা কর ঘিরে

পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হলে আপত্তি নেই। কিন্তু তার দরুন রাজ্যগুলির কর আদায়ে যে ক্ষতি হবে, তা পুষিয়ে দিতে হবে কেন্দ্রকে। জিএসটির আওতার বাইরে রাখতে হবে পেট্রোল, ডিজেলের মতো পণ্যকেও। রাজ্যগুলির এই সব পুরনো দাবির কারণে মোদী-সরকারের জমানাতেও জিএসটি ঘিরে জটিলতা আপাতত বহালই রইল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

বৈঠকের আগে অন্যান্য রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ছবি: পিটিআই।

পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হলে আপত্তি নেই। কিন্তু তার দরুন রাজ্যগুলির কর আদায়ে যে ক্ষতি হবে, তা পুষিয়ে দিতে হবে কেন্দ্রকে। জিএসটির আওতার বাইরে রাখতে হবে পেট্রোল, ডিজেলের মতো পণ্যকেও। রাজ্যগুলির এই সব পুরনো দাবির কারণে মোদী-সরকারের জমানাতেও জিএসটি ঘিরে জটিলতা আপাতত বহালই রইল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অবশ্য দাবি, দ্রুত জিএসটি চালু করতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চান তাঁরা। কিন্তু তা নিয়ে যে এখনই নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া যাচ্ছে না, তা স্পষ্ট অর্থ প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কথাতেই। তাঁর দাবি, এই সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। ঐকমত্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে, তা এখনই বলা শক্ত।

জিএসটির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কমিটির চেয়ারম্যান জম্মু-কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আবদুল রহিম রাঠের বলেন, “সব রাজ্যই জিএসটি চায়। কিন্তু তাদের উদ্বেগের জায়গাগুলি দেখতে হবে।” এ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের দাবি, জিএসটি চালুর পরে তিন বছরের (অন্যান্য রাজ্যের যা দাবি) বদলে পাঁচ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে জিএসটি আদায় হবে, তার ভাগ নিয়েও রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কাছে জোরালো দাবি তুলেছে। ওই করের একটি ভাগ এমনিতেই রাজ্য পাবে। কিন্তু অমিত মিত্র থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা চান, বাকি অংশও অর্থ কমিশনের সূত্র ধরে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ভাগাভাগি হোক। অমিতবাবু আবার বলেন, প্রবেশ করকেও পণ্য-পরিষেবা করের আওতার বাইরে রাখতে হবে।

Advertisement

বাজেটের মুখে মোদী-সরকারের কাছে শিল্পমহল ও ব্যবসায়ীদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব জিএসটি চালু হোক। বণিকসভা থেকে অর্থনীতিবিদ সকলেরই যুক্তি, ওই কর চালু হলে কর-জটিলতা কমবে। সহজ হবে ব্যবসা করা। অর্থনীতিতে গতি আসবে। এমনকী এর পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের ভারতীয় প্রধান অন্নো রল-ও। তাঁর যুক্তি, জিএসটি চালু হলে ভারতে কর ব্যবস্থার জটিলতা কমবে। কমবে জিনিসপত্রের দামও। এই সব কারণে অনেকেরই প্রত্যাশা, আগামী ১০ জুলাই অরুণ জেটলি তাঁর বাজেটে জিএসটি সম্পর্কে নির্দিষ্ট রূপরেখা দেবেন।

এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে এ দিন জেটলি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এমপাওয়ার্ড কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু সেখানে দেখা যায়, জিএসটি নিয়ে ইউপিএ-সরকার যেখানে হোঁচট খেয়েছিল, জেটলিকেও সেই একই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকী বিজেপি শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাও জানান, রাজ্যগুলির রাজস্ব আয়ের ক্ষতি করে জিএসটি চালু করা চলবে না।

এ দিনই বিভিন্ন রাজ্য ফের একজোট হয়ে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানায়, কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে হবে। তার জন্য খাতায়-কলমে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। কেন্দ্রের মর্জিমাফিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া চলবে না।

উল্লেখ্য, জিএসটি চালুর জন্য কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইউপিএ-সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এ জন্য রাজ্যগুলির রাজস্ব আয় বাবদ যে ক্ষতি হবে, তা কেন্দ্র মিটিয়ে দেবে। কিন্তু রাজ্যের অভিযোগ, পরে সেই কথা রাখা হয়নি। যেমন অমিতবাবু বলেন, “প্রথমে ভ্যাট বাড়ানোর যুক্তি দিয়ে আমাদের ৬৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল না। গত সাড়ে তিন বছর ধরে বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণ পাওয়া বন্ধ। যার জন্য ৪,৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।”

জেটলি জানান, জিএসটি চালু হলে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়েরই লাভ। রাজ্যগুলির দাবির কতটা জিএসটি বিলে রাখা যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বক্তব্য, জিএসটি চালুর পথে বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়াই সব থেকে বড় বাধা। কারণ তা মেটাতে অন্তত ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। কারও কারও হিসেবে ৬৪ হাজার কোটি। যেখানে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্র হিমসিম, সেখানে এত বড় অঙ্কের প্রতিশ্রুতি দেওয়া জেটলির পক্ষে কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন