ব্যাঙ্কের লোগো চেনাচ্ছেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র
আগামী ২৩ অগস্ট ব্যাঙ্ক হিসেবে যাত্রা শুরু। আর শেয়ার বাজারে নথিভুক্তির পরিকল্পনা তার তিন বছরের মাথায়, ২০১৮ সালে। পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ্ক হিসেবে বন্ধন-এর পথ চলা কেমন হবে, বৃহস্পতিবার তার ছবি তুলে ধরলেন কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ। নালেন, আগামী মাসে কলকাতায় ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এবং বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ-র চেয়ারম্যানরাও।
চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, ভারতের ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় নতুন যুগের সূচনা হবে বন্ধন ব্যাঙ্কের হাত ধরে। সেখানে অগ্রাধিকার পাবেন তাঁরাই, যাঁদের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুবিধা এখনও পৌঁছয়নি। যেমন, শুধু সই করতে না-পারার কারণে যাতে পরিষেবা পাওয়া না-আটকায়, তা নিশ্চিত করতে আঙুলের ছাপ নিয়েই (বায়োমেট্রিক পদ্ধতি) অ্যাকাউন্ট খোলার বন্দোবস্ত করছেন তাঁরা। এ জন্য শাখায় রাখা হবে বিশেষ যন্ত্র।
পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনও ব্যাঙ্ক চালু হতে চলেছে পূর্ব ভারতে। এমনকী ২০০৪ সালে ইয়েস ব্যাঙ্কের চাকা গড়ানোর পরে সারা দেশেও এমনটা আর ঘটেনি। শুরুতে দেশে ছ’শোর মতো শাখা নিয়ে পরিষেবা শুরু করবে বন্ধন ব্যাঙ্ক। সঙ্গে আড়াইশো এটিএম। সদর দফতর কলকাতায়। ৩৮টি শাখাও কলকাতাতেই।
চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, সারা দেশে পরিষেবা দিলেও এ রাজ্য-সহ পূর্ব ভারতে বাড়তি জোর দেবেন তাঁরা। কারণ, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বিস্তারের সুযোগ এই অঞ্চলেই সব থেকে বেশি। দক্ষিণ ভারতে যেখানে ২৮% লোক ব্যাঙ্কে লেনদেন করেন, সেখানে এই অঞ্চলে তা ১৬%। শুধু তা-ই নয়। তাঁর হিসেব অনুযায়ী, এ রাজ্য থেকে আমানত সংগ্রহ করে তার বড় অংশই অন্য রাজ্যে ধার দেয় বাকি ব্যাঙ্ক। ১০০ টাকা আমানত উঠলে, ঋণ মেলে ৪৬ টাকা। সেই ছবি এ বার বদলাতে চান তিনি।
বন্ধন কর্ণধার জানাচ্ছেন, শুরুতে আমানত সংগ্রহ, ঋণ দেওয়া, বিমা পলিসি বিপণন এবং গ্রাহকের হয়ে তাঁর টাকা এক জায়গা থেকে অন্যত্র পাঠানোর পরিষেবা চালু করছেন তাঁরা। বিমা পলিসি বিপণনের জন্য জীবনবিমা নিগম (এলআইসি) এবং বজাজের সঙ্গে গাঁটছড়া রয়েছে। কথা চলছে আরও কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতীক (লোগো) প্রকাশ করেন চন্দ্রশেখরবাবু। ঘোষণা করেন পরিচালন পর্ষদের সদস্যদের নামও। ব্যাঙ্কের প্রতীক হিসেবে গাঢ় লাল বলয়ে সাদা প্রদীপের শিখার নকশা এঁকেছে যে-বিজ্ঞাপন এজেন্সি, সেই ওগিলভি অ্যান্ড ম্যাথারের দক্ষিণ এশীয় কর্তা পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘লাল রং শুভর প্রতীক। আর এই দীপশিখা নতুন আশা, নতুন দিনের ধারক।’’
বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রস্তাবিত পরিচালন পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অশোক কুমার লাহিড়ী। ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও চন্দ্রশেখরবাবু। এ ছাড়া আছেন কর্পোরেশন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি বি শাম্বমূর্তি, জি ডি আপ্তে অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার সি এম দীক্ষিত, ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর স্নেহময় ভট্টাচার্য, সিডবি-র প্রাক্তন চিফ জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ কুমার সাহা, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি এমডি শিশির কুমার চক্রবর্তী, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন এবং ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্টের চিফ জেনারেল ম্যানেজার টি এস রাজি গেইন। এ দিন বন্ধনের সদর দফতরে প্রথম বার বৈঠক সেরেছেন তাঁরা। পর্ষদের চূড়ান্ত অনুমোদন অবশ্য আসবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘর থেকে।
ব্যাঙ্ক হিসেবে ভিত কত শক্ত হবে, তা বোঝাতে গিয়ে চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, এখন তাঁদের মোট শেয়ার মূলধন ২,৭০০ কোটি টাকার। বিশ্বব্যাঙ্কের শাখা আইএফসি এবং সিঙ্গাপুরের আর্থিক সংস্থা জিআইসি-র নতুন লগ্নির পরে তা পৌঁছবে ৩,২০০ কোটিতে। তাঁর দাবি, প্রতি ১০০ টাকা ধার দেওয়ার জন্য মূলধন হিসেবে রাখতে হয় ১২ টাকা। কিন্তু বন্ধন ব্যাঙ্কের হাতে থাকবে তার প্রায় তিন গুণ। তৈরি হবে আরও কাজের সুযোগ। শুধু লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৮,০০০ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা হয়েও পুরোদস্তুর ব্যাঙ্ক হওয়ার লাইসেন্স এ দেশে প্রথম ছিনিয়ে এনেছে বন্ধনই। চন্দ্রশেখরবাবু এ দিন ফের বলেছেন, এর ফলে ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবা আরও ভাল ভাবে দেওয়া যাবে। কারণ, কমবে আমানত সংগ্রহের খরচ। ফলে ধাপে ধাপে কমানো যাবে সুদও।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়ার দিনে চন্দ্রশেখরবাবু বলেছিলেন, তাঁর ব্যাঙ্কে লাল গালিচার অভ্যর্থনা বরাদ্দ থাকবে গরিবগুর্বোদের জন্য। ২৩ অগস্ট থেকে সেই কথা রাখার দৌড় শুরু করছেন তিনি।