কেন্দ্রের পুঁজি গিলে খেয়েছে ব্যাঙ্কের ক্ষতিই

গত আর্থিক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে যে মূলধন কেন্দ্র জুগিয়েছিল, তার প্রায় পুরোটাকেই গিলে খেয়েছে তাদের বিপুল লোকসান। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, চলতি অর্থবর্ষেও এই ছবি বদলানোর সম্ভাবনা নিতান্ত ক্ষীণ বলে মনে করছে মার্কিন মূল্যায়ন বহুজাতিক ফিচের সমীক্ষা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০৩:১৯
Share:

গত আর্থিক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে যে মূলধন কেন্দ্র জুগিয়েছিল, তার প্রায় পুরোটাকেই গিলে খেয়েছে তাদের বিপুল লোকসান। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, চলতি অর্থবর্ষেও এই ছবি বদলানোর সম্ভাবনা নিতান্ত ক্ষীণ বলে মনে করছে মার্কিন মূল্যায়ন বহুজাতিক ফিচের সমীক্ষা। এমনকী ক্ষতির বহর আরও বাড়লে, কিছু ব্যাঙ্কের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা তাদের।

Advertisement

অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় ধুঁকতে থাকা সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে চাঙ্গা করতে মোট ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা মূলধন জোগানোর কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। দাবি ছিল, এর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে তারা। অনাদায়ী ঋণের ঝামেলা সামলে ঋণ বাড়াতে পারবে সাধারণ মানুষ এবং ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য। কিন্তু ফিচের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবর্ষে কেন্দ্র যে পরিমাণ মূলধন (৮৮ হাজার কোটি টাকা) জুগিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মোট লোকসান প্রায় তার সমান।

ফেব্রুয়ারিতে অনুৎপাদক সম্পদ চিহ্নিত করার নতুন নিয়ম চালু করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আগের নিয়মে যে সব অনাদায়ী ঋণ অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে দেখানোর প্রয়োজন হত না, নতুন ব্যবস্থায় সেই সব ঋণের অনেকাংশই অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে হিসেবের খাতায় উঠবে। সে জন্য সংস্থান করতে গিয়েই বাড়তি লোকসান গুনতে হচ্ছে।

Advertisement

কেন্দ্রের পুঁজি

• গত ও চলতি অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে মূলধন হিসেবে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা।

• এর মধ্যে ১.৩৫ লক্ষ কোটি আসার কথা ঋণপত্র থেকে। ৭৬,০০০ কোটি বাজেট বরাদ্দ।

• গত অর্থবর্ষে জোগানো হয়েছে মোট ৮৮,০০০ কোটি।

বিপুল ক্ষতি

• লোকসানের মুখে দেখেছে ২১টির মধ্যে ১৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই। ফল ভাল নয় বেসরকারি ব্যাঙ্কেরও।

• গত অর্থবর্ষে মোট ক্ষতির অঙ্ক কেন্দ্রের জোগানো মূলধনের (৮৮,০০০ কোটি) প্রায় সমান।

• ব্যাঙ্কিং শিল্পে অনুৎপাদক সম্পদ মোট ঋণের ৯.৩% থেকে বেড়ে ১২.১%। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ১৪.৫%। আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, ইউকো ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কে তা ২৫ শতাংশের আশেপাশে।

• অনুৎপাদক সম্পদ খাতে সংস্থান করতে তাই খাবি খাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। চিঁড়ে ভিজছে না কেন্দ্রের মূলধনে।

রুপোলি রেখা

• অনুৎপাদক সম্পদ ঘোষণার নিয়মে কড়াকড়ি বেড়েছে। তাই আশা, এখন সমস্যা সামাল দেওয়া মুশকিল হলেও, দীর্ঘ মেয়াদে পরিষ্কার হবে ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা।

ঘুরে দাঁড়াতে পরিকল্পনা: দু’বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পরিকল্পনা তৈরি করে আর্থিক পরিষেবা বিষয়ক দফতরে জমা দিল প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশনের (পিসিএ) আওতায় থাকা ন’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। যে সব ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাবে খারাপ, তাদেরই এর আওতায় এনেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাঙ্কের গায়ে পিসিএ তকমা লেগেছে।

এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে একাধিক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এর মধ্যে আছে ডিভিডেন্ড দেওয়া থেকে ঋণে নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত অনেক কিছুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন