মাসের শেষে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে হয়রানি চরমে

দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট ডাকা হলেও তার প্রভাব সব থেকে বেশি পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেই। ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসার ইউনিয়নগুলি এই দাবি জানিয়ে অবশ্য বলেছে, মঙ্গলবারের ধর্মঘটের জেরে সারা দেশেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা কম-বেশি ব্যাহত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৩
Share:

দুর্ভোগ: ঝাঁপ বন্ধ এটিএমেরও। ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে দিনভর টাকার খোঁজে নাকাল হওয়ার এক টুকরো ছবি। মঙ্গলবার ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট ডাকা হলেও তার প্রভাব সব থেকে বেশি পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেই। ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসার ইউনিয়নগুলি এই দাবি জানিয়ে অবশ্য বলেছে, মঙ্গলবারের ধর্মঘটের জেরে সারা দেশেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা কম-বেশি ব্যাহত। দিনভর অসুবিধায় পড়েছেন মানুষ। মাসের শেষ দিনে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তি চরমে ওঠে ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে শুধু বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখাই যে বন্ধ ছিল তা নয়, অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়েছিল এটিএম পরিষেবাও। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগরের দাবি, রাজ্যে সাড়ে ১০ হাজার এটিএমের মধ্যে ৯০ শতাংশেরই ঝাঁপ এই দিন খোলেনি। তবে বেশ কিছু এটিএম সকালের দিকে খোলা ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। কিন্তু সেগুলিতে লম্বা লাইন পড়ায় নগদ ফুরিয়ে যায় দ্রুত। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের আওতার বাইরে থাকলেও সেখানে চেক ক্লিয়ারিং-সহ অন্যান্য কাজকর্ম তেমন কিছু হয়নি বলেও শীর্ষ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর।

এই ধর্মঘটের আওতা থেকে আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে বাদ রাখা হয়েছিল। রাজেনবাবু বলেন, ‘‘আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ইউনিয়নগুলি নিজেদের দাবি নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলন করছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারিই সেখানে ধর্মঘট হয়েছে। তাই এ দিন ধর্মঘটের আওতা থেকে আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে বাদ রাখা হয়েছিল।’’ তবে তা সত্ত্বেও আইডিবিআই ব্যাঙ্কের প্রায় ৫০ শতাংশ শাখা বন্ধ ছিল বলে দাবি করেন রাজেনবাবু।

Advertisement

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ আদায়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট পদক্ষেপ না-করা এবং একটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে অন্যটিকে মিশিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ডাকা হয় এই ধর্মঘট। এ ছাড়াও ছিল শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ, নোট-কাণ্ডের সময়ে ব্যাঙ্ককর্মীদের অতিরিক্ত সময় কাজের জন্য বাড়তি মজুরি-সহ আরও কিছু দাবি। ধর্মঘট করে ইউনাই়েড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্সের আওতায় থাকা কর্মী এবং অফিসারদের ৯টি ইউনিয়ন।

দিনের শেষে ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাস জানান, দাবিগুলির ব্যাপারে কেন্দ্র কী ব্যবস্থা নেয়, তার উপর কিছু দিন আমরা নজর রাখব। যথেষ্ট ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি তৈরির জন্য ইউনিয়নগুলি
বৈঠকে বসবে।

এ দিকে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের সমালোচনায় গলা চড়িয়েছে শিল্পমহল। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের পক্ষ থেকে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ডিএস রাওয়াত বলেন, এক দিনের এই ধর্মঘটে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন বন্ধ থাকা ছাড়াও অন্যান্য কারণে ব্যাঙ্ক শিল্পে প্রায় ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ দিকে, মাসের শেষ দিনে ধর্মঘটের ফলে বিশেষ করে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে ব্যবসায়ী মহল। বস্তুত, শেষ দিনেই মাসভর কেনাবেচার টাকা মেটানো হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার ফলে নগদ বা চেক, কোনও ভাবেই টাকা মেটানো সম্ভব হয়নি। বিপাকে পড়ে কর্পোরেট মহলও। মাসের শেষ দিনে গোটা মাসের বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য এই দিনটার দিকে তাকিয়ে থাকেন ক্রেতা-বিক্রেতা, দু’পক্ষই। বিশেষত, নির্মাণ সংস্থাগুলি এ দিন পাইকারি ও খুচরো বিপণন সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা আদায় করে হিসেবের খাতা মিলিয়ে নেয়। আর ধর্মঘটের জন্য সমস্যা তৈরি হয় সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন