মেক ইন ইন্ডিয়া সম্মেলনে যাচ্ছে না রাজ্য

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক আয়োজিত উৎপাদন শিল্পের রাজসূয় যজ্ঞ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া উইক’-এ সামিল হতে পা বাড়িয়েছে ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে এই শিল্প সম্মেলনে তাদের যোগ দেওয়ার লক্ষ্য একটাই। এই মঞ্চে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে লগ্নিকারীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু মঞ্চে হাজির হবে না পশ্চিমবঙ্গ, মূলত উৎপাদন শিল্পের অভাবে যে-রাজ্যের মেধাসম্পদ লাগাতার ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেয়। সম্মেলনে ৬৯টি রাষ্ট্রও যোগ দিচ্ছে।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৪
Share:

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক আয়োজিত উৎপাদন শিল্পের রাজসূয় যজ্ঞ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া উইক’-এ সামিল হতে পা বাড়িয়েছে ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে এই শিল্প সম্মেলনে তাদের যোগ দেওয়ার লক্ষ্য একটাই। এই মঞ্চে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে লগ্নিকারীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু মঞ্চে হাজির হবে না পশ্চিমবঙ্গ, মূলত উৎপাদন শিল্পের অভাবে যে-রাজ্যের মেধাসম্পদ লাগাতার ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেয়। সম্মেলনে ৬৯টি রাষ্ট্রও যোগ দিচ্ছে।

Advertisement

মেক ইন ইন্ডিয়া সপ্তাহ পালনে এক দিকে সাফল্য তুলে ধরতে ঝাঁপিয়েছে তামিলনাড়ু, গুজরাত, মহারাষ্ট্রের মতো শিল্পোন্নত রাজ্য। অন্য দিকে, লগ্নির তালিকায় উপরে উঠতে নাম লিখিয়েছে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, তেলঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কেরল, কর্নাটক, ওড়িশা। তবে উৎপাদন শিল্পে পুঁজি টানার লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে ২৬ হাজার প্রতিনিধি যোগ দিলেও থাকবে না পশ্চিমবঙ্গ।

দিল্লি, মুম্বই থেকে সিঙ্গাপুর, লন্ডন। রাজ্যের শিল্পমুখী ভাবনা তুলে ধরতে এ সব শহরে দৌড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ রাজ্যকে তুলে ধরার এমন সুযোগ পশ্চিমবঙ্গ কেন হারাল, তা নিয়ে রাজ্য সরকার নিরুত্তর। শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। এসএমএস করেও উত্তর মেলেনি। শিল্প সচিব কৃষ্ণ গুপ্ত এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।

Advertisement

রাজ্য নীরব থাকলেও ক্ষোভ জানাতে দ্বিধা করেনি শিল্পমহল। গাড়ি, রাসায়নিক ও পেট্রোপণ্য, পরিকাঠামো, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, ছোট ও মাঝারি শিল্প-সহ এগারোটি ক্ষেত্র বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে সম্মেলনে। ১৯০টির বেশি সংস্থা আসছে, যাদের একই ছাদের তলায় পাওয়াটা বিরল ঘটনা। টাটা, রিলায়্যান্স, অশোক লেল্যান্ড, মারুতি, রেনো, ফোক্সভাগেন, স্নাইডার, এশিয়ান পেন্টস, বোয়িং, ভারত ফোর্জ, ব্রিটানিয়া, নেসলে, এসার-এর মতো বেসরকারি ক্ষেত্রের তারকারা থাকছে। সঙ্গে ইন্ডিয়ান অয়েল, গেইল, সেল, ভারত পেট্রোলিয়ামের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। আর এখানেই শিল্পমহল প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের ভাবনা-চিন্তা নিয়ে।

যে-রাজ্যে উৎপাদন শিল্পে লগ্নির অভাবে মার খাচ্ছেন ওই ধরনের প্রকল্পে ভবিষ্যতে কাজ করতে আগ্রহী ছাত্ররা, সে রাজ্য এমন মঞ্চ কেন ব্যবহার করতে চায় না— এই প্রশ্ন গত কয়েক দিন ধরেই স্থানীয় শিল্পমহলে পাক খাচ্ছে। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের প্রাক্তন কর্তা কল্লোল দত্ত জানান, রাজ্যের অবশ্যই থাকা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের রাজ্যের হয়তো খুব বেশি কিছু নেই। কিন্তু যা আছে তা কেন দেখাব না? এমন সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক নয়।’’ এ প্রসঙ্গে তিনি পাট ও ছোট-মাঝারি শিল্পের কথা বলেন। তাঁর মতে, রাজ্য সরকার ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য নীতি থেকে শুরু করে তহবিল ও পরিকাঠামো তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। এই মঞ্চে সেই তথ্য জানানো যেতে পারত।

তবে অন্য দিকে শিল্পমহলের আর এক অংশের ভিন্ন প্রতিক্রিয়াও আছে। তাদের মতে, এ রাজ্যে শিল্পায়নের ছবি এখনও ফিকে। সেটা তুলে ধরা কাজের কাজ হবে না। বণিকসভা আইসিসি-র প্রাক্তন কর্তা হর্ষ ঝা বলেন, ‘‘বাস্তবকে মানতে হবে। রাজ্যে লগ্নির পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। ছোট মাপের লগ্নি আসতে পারে। কিন্তু বড় বিনিয়োগ করার মতো সাহস দেখানোর লোক নেই বললেই চলে।’’ ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য রাজ্যের সামনে মুখ পুড়ে যাওয়া ঠেকাতেই রাজ্য সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না বলে মনে করছে তারা।

রাজ্যের দেওয়া তথ্য বলছে এখানে শিল্প বৃদ্ধির হার ৮.৭৪%। এর মধ্যে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি ৫.৪৫%। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এটা নেহাতই কম। বিশেষজ্ঞদের দাবি, উৎপাদন শিল্পে ১৫% বৃদ্ধির হার ছাড়া উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণ অসম্ভব। কারণ কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস এই শিল্পই।

হতাশ রাজ্যের স্টার্ট-আপ শিল্পও। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে ঘোষিত হয়েছে ‘স্টার্ট-আপ’ নীতি। তামিলনাড়ু, কর্নাটক, রাজস্থান, কেরলের মতো গুটি কয়েক রাজ্য ছাড়া এই নীতি কারও নেই। এই মঞ্চে সেই বাড়তি সুবিধা দেখানোর সুযোগ মিলত বলে মনে করছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন