অমিত শাহের সামনে মুখ খুলেই বিজেপির নিশানায় অন্য রাহুল

ঠিক এই আশঙ্কার কথাই গত কাল মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন বজাজ। বলেছিলেন, শিল্পমহলের আশঙ্কার কথা তারা নিজেরা শোনাতে পারছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৩
Share:

শিল্পপতি রাহুল বজাজের তীব্র সমালোচনা শুরু করে দিল অমিত শাহের দল!

সাহস করেই ভরা সভায় অমিত শাহকে কথাটি বলে ফেলেছিলেন অশীতিপর শিল্পপতি। ভরা সভায় বসে তাঁকে অভয় দিয়েছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Advertisement

তার পরে কেটেছে মাত্রই কয়েকটা ঘণ্টা। দেশের অন্যতম শিল্পপতি রাহুল বজাজের তীব্র সমালোচনা শুরু করে দিল অমিত শাহের দল!

ঠিক এই আশঙ্কার কথাই গত কাল মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন বজাজ। বলেছিলেন, শিল্পমহলের আশঙ্কার কথা তারা নিজেরা শোনাতে পারছে না। খোদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও গত শুক্রবার বলেছিলেন, শিল্পমহল আতঙ্কে রয়েছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে গত কাল রাতে সেই প্রশ্নটিই করে ফেলেন বজাজ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান।

Advertisement

আরও পড়ুন: জিএসটি আদায় ছাড়াল ১ লক্ষ কোটি

অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মাঝখানে বসা অমিত শাহের উদ্দেশে বজাজ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনাদের বিরুদ্ধে বলতে লোকে ভয় পান। কেন এমন এক পরিবেশ হবে, যেখানে আপনারা ভাল কাজ করলেও প্রকাশ্যে সমালোচনা করা যাবে না? আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু আপনারা সমালোচনা পছন্দ করবেন, এমন আত্মবিশ্বাস আমার নেই।’’ প্রশ্ন করার সময় বজাজের পিছনেই বসেছিলেন অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। বজাজের প্রশ্নে অমিত শাহ হাসিমুখেই জবাব দেন, ‘‘আপনার প্রশ্নের পরে কেউ মানবেন না যে, কেউ ভয় পান। আমাদের বিরুদ্ধেই সব থেকে বেশি লেখা হচ্ছে। পরিবেশের সংশোধন করতে হবে। তবে ভয় পাওয়ার কোনও দরকার নেই। কেউ ভয় পাওয়াতে চায় না। না এমন কিছু করা হয়েছে, যা বললে সরকারের চিন্তার কারণ আছে।’’

অমিত শাহের অভয়বাণীর পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। দলের নির্দেশ পেয়ে আসরে নেমে পড়লেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-নেতারা। প্রবীণ শিল্পপতিকে বিঁধে নির্মলা সীতারামনের বক্তব্য, উত্তর চাওয়ার বদলে আকর্ষণ পেতে এ ভাবে নিজের মনোভাব প্রকাশ জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরীও বজাজকে আক্রমণ করেছেন। দলের ইঙ্গিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেমে পড়েছেন বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি মোর্চার প্রধান অমিত মালব্য। খুঁজে বার করেছেন রাহুল বজাজের পুরনো ভিডিয়ো, তাঁর সম্পর্কে নথিপত্র। গত কাল অমিত শাহকে প্রশ্ন করার সময় বাণিজ্যমন্ত্রীর নাম করে রাহুল বজাজ দাবি করেছিলেন, পীযূষ গয়াল জানেন, তিনি সব সময় সকলের সমালোচনা করে এসেছেন। কারও প্রশংসা করা ধাতে নেই। বিজেপি জারি করল একটি ভিডিয়ো। যেখানে এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে রাহুল গাঁধীর বক্তৃতার পরে রাহুল বজাজ বলছেন, ‘‘যতক্ষণ না কেউ অসাধারণ হন, ততক্ষণ কারও প্রশংসা করতে দ্বিধা করি। কিন্তু আজ বলব, ওঁর (রাহুল গাঁধীর) শরীরী ভাষা, আবেগে আমি বেশ মুগ্ধ।’’

বিজেপির খোঁচা, ‘‘রাহুল বজাজের পক্ষে কারও প্রশংসা করা কঠিন। অবশ্যই রাহুল গাঁধী তার ব্যতিক্রম।’’ সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ভয়ের পরিবেশের মতো অর্থহীন কথার আড়ালে লুকোবেন না, নিজের রাজনৈতিক যোগটি স্পষ্ট করুন।’’ বিজেপির বক্তব্য, রাহুল গাঁধীর প্রতি তাঁর এত প্রশস্তি বোঝায়, লাইসেন্স-রাজের সময় বেড়ে ওঠা শিল্পপতিদের আনুগত্য সব সময় কংগ্রেসের দিকেই থাকবে। নিজেদের বক্তব্যকে জোরালো করতে বিজেপি আজ আইআইএম-আমদাবাদের একটি ‘কেস-স্টাডি’ও সামনে এনেছে। যেখানে বলা হয়েছে, বজাজ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে সংস্থার চুক্তি করেছেন। কাল বজাজ দাবি করেছিলেন, গত ৪০-৪৫ বছরে তিনি কোনও মন্ত্রীর বাড়ি বা দফতরে যাননি। পাশাপাশি, বিজেপি আজ এমন কয়েক জন শিল্পপতির বক্তব্য নেট-দুনিয়ায় ছড়িয়েছে, যাঁরা বজাজের ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন।

বিজেপির আক্রমণের জবাবে মুখ খুলেছেন শিল্পপতি কিরণ মজুমদার শ। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করে টুইটারে তাঁর বক্তব্য, সরকারের উচিত চাহিদা ও বৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া। কিন্তু সরকার অর্থনীতি নিয়ে কোনও সমালোচনাই শুনতে নারাজ। পাশাপাশি কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বজাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। আর বিজেপিকে বিঁধে কংগ্রেসের পবন খেরা বলেছেন, ‘‘সমালোচনা সহ্য করতে না পারাটাই বিজেপির সমস্যা। ইউপিএ জমানায় সকলে খোলাখুলি সরকারের সমালোচনা করতেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ খোলাখুলি প্রশ্ন নিতেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে। অথচ পাঁচ বছরের বেশি কাটিয়ে দেওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটিও সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না! আজ তাঁদের বিরুদ্ধে সামান্য সমালোচনা করলেই পাল্টা ভয় দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। অমিত শাহের আশ্বাস যে ফাঁপা, তা আরও একবার স্পষ্ট হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন