ব্যবসাই জুড়ছে সম্পর্কের সুতো

এগারো বছর আগে ছিঁড়ে যাওয়া ব্যবসা-সম্পর্কের সুতো ক্রমশ ফের জোড়া লাগছে টেলিকম ব্যবসার হাত ধরেই। রিলায়্যান্সের সাম্রাজ্য ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া তিক্ততা পিছনে ফেলে গত দু’তিন বছর ধরেই ‘কাছাকাছি’ আসছিলেন দুই ভাই। মুকেশ এবং অনিল অম্বানী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৫
Share:

এগারো বছর আগে ছিঁড়ে যাওয়া ব্যবসা-সম্পর্কের সুতো ক্রমশ ফের জোড়া লাগছে টেলিকম ব্যবসার হাত ধরেই। রিলায়্যান্সের সাম্রাজ্য ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া তিক্ততা পিছনে ফেলে গত দু’তিন বছর ধরেই ‘কাছাকাছি’ আসছিলেন দুই ভাই। মুকেশ এবং অনিল অম্বানী। চুক্তি হচ্ছিল একে-অন্যের স্পেকট্রাম, মোবাইল টাওয়ার, অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল ব্যবহার করা নিয়ে। মঙ্গলবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ছোট ভাই অনিলের ঘোষণা, বাবা ধীরুভাই অম্বানীর স্বপ্ন সফল করতে একসঙ্গে কাজ করছেন তাঁরা। বাস্তবের প্রয়োজন মাথায় রেখে কার্যত মিশেই গিয়েছে তাঁর রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স (আর-কম) এবং বড় ভাই মুকেশের জিও।

Advertisement

সে দিক থেকে দেখলে, এ দিন অনিলের রিলায়্যান্স এডিএ গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার বার্ষিক সভা একই সঙ্গে সাক্ষী থাকল অম্বানী পরিবারের দুই প্রজন্মের দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার। এক দিকে, টেলিকম পরিষেবার ব্যবসায় অনিল এ ভাবে স্পষ্ট হাত মেলানোর কথা বলায় দুই ভাইয়ের দূরত্ব আরও কমলো। আর অন্য দিকে, এ দিনই শেয়ারহোল্ডারদের সামনে অনিলের আর্থিক সংস্থা রিলায়্যান্স ক্যাপিটালের পর্ষদে অভিষেক হল তাঁর ছেলে অনমোল অম্বানীর। দুই ভাইয়ের ব্যবসাতেই পুরোদস্তুর হাতেখড়ি হল পরের প্রজন্মের। মুকেশের ছেলে আকাশ, মেয়ে ঈশার পরে পারিবারিক ব্যবসার বৃত্তে চলে এলেন অনমোলও।

২০০৫ সালে ব্যবসার হাঁড়ি আলাদা হওয়ার পর থেকে দুই ভাই মিলে বাবার স্বপ্ন সফল করার কথা এই প্রথম বললেন তাঁরা কেউ। তাতে রক্তের টান যেমন আছে, তেমনই রয়েছে ব্যবসার বাধ্যবাধকতা। গ্রাহক সংখ্যার বিচারে অনিলের আর-কম এই মুহূর্তে দেশে চতুর্থ। কিন্তু তেমনই রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বোঝা। এক বছরের মধ্যে যার ৭৫% কমাতে চান ধীরুভাইয়ের ছোট পুত্র। অনেকে বলছেন, জিও-কে পরিষেবা দেওয়ার জন্য স্পেকট্রাম, মোবাইল টাওয়ারের মতো পরিকাঠামো জুগিয়ে আয় বাড়াতে পারলে ওই ঋণ শোধে সুবিধা হবে অনিলের। উল্টো দিকে, ২জি, ৩জি, ৪জি— সব ধরনের পরিষেবার জন্যই উপযুক্ত স্পেকট্রাম আর কম-এর হাতে মজুত। রয়েছে টাওয়ার এবং অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌লের বিপুল পরিকাঠামো। সারা দেশে সস্তায় টেলি পরিষেবা দেওয়ার জন্য যা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চান না মুকেশও।

Advertisement

এই পারস্পরিক নির্ভরতা থেকেই সম্ভবত গত দু’তিন বছরে কিছুটা কাছাকাছি এসেছেন দুই ভাই। ২,৩০০ মেগাহার্ৎজের মতো ৮৫০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রামও ৪জি পরিষেবা দিতে উপযোগী। প্রথমটি মুকেশের হাতে থাকলে, দ্বিতীয়টি আছে অনিলের হাতে।

দ্বিতীয় স্পেকট্রামটি ভাগাভাগি করে ব্যবহারের জন্য বছর দুই আগে ভাইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন মুকেশ। উল্টো দিকে, ২,৩০০ মেগাহার্ৎজের স্পেকট্রাম ব্যবহারের জন্য মুকেশের দ্বারস্থ হন অনিল। তেমনই আবার আর কম-এর টাওয়ার ও কেব্‌ল ব্যবহারের জন্যও যথাক্রমে ১২ হাজার কোটি ও ১,২০০ কোটি টাকায় চুক্তি করেছিল জিও। এ সমস্ত মাথায় রেখেই এ দিন দুই সংস্থা কার্যত মেশানোর (ভার্চুয়াল মার্জার) কথা বলেছেন অনিল।

আর কম-এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ধীরুভাই প্রায়ই বলতেন, টেলিফোন কলের খরচ হওয়া উচিত পোস্টকার্ডের দামের থেকেও কম। সেই কম খরচে (জিও-র দাবি নিখরচায়) পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েই দেশের বাজারে ঝড় তুলতে চাইছে মুকেশের সংস্থা। তাঁর লক্ষ্য পূরণে বড় হাতিয়ার হতে পারে অনিলের সংস্থার পরিকাঠামো। তাতে আবার ধার শোধে সুবিধা হবে ছোট ভাইয়েরও।

ধীরুভাইয়ের স্বপ্ন আর ব্যবসার এই সম্ভাবনা-সমীকরণই সম্ভবত দ্রুত কাছাকাছি নিয়ে আসছে দুই ভাইকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন