কোথাও জলের অভাব নেই। কিন্তু তার এক ফোঁটাও পান করার যোগ্য নয়। রাজ্য তথা দেশের শিক্ষার মান প্রসঙ্গে প্রচলিত এই প্রবাদই অনেকাংশে খাটে। কারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ সব পড়ুয়ারই ডিগ্রি থাকলেও, তাঁদের বেশির ভাগই কাজের যোগ্য নন।
শনিবার বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বারে কর্মযোগ্যতা নিয়ে এক সভায় এই বক্তব্যই উঠে এল। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পাঠ্যক্রম তৈরির প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সওয়াল করলেন বণিকসভার কর্তারা। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজগুলির মানোন্নয়নেও উদ্যোগী হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয়ের অভাব নিয়ে কয়েক বছর ধরে সরব শিল্পমহল। ইউপিএ জমানা থেকেই বিভিন্ন বণিকসভার সঙ্গে বিশেষ করে কারিগরি (আইটিআই) বা ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের গাঁটছড়া বাঁধা, পাঠ্যক্রমের প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রয়াস শুরু হয়। উল্লেখ্য, এআইসিটিই-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, দেশের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বছরে যে আট লক্ষ পড়ুয়া উত্তীর্ণ হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশই বেকার। এআইসিটিই-র দাবি, এর ফলে দেশে বছরে ২০ লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হচ্ছে। সভায়
এ প্রসঙ্গও ওঠে। বেঙ্গল চেম্বারের অন্যতম কর্তা সোমেশ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শিল্পের নানা ক্ষেত্রে কাজের সুযোগের অভাব নেই। কিন্তু কর্মযোগ্যতা বড় প্রশ্ন।’’ আর এক কর্তা রাহুল বসু শিক্ষিত পড়ুয়া ও তাঁদের কাজের যোগ্যতার ফারাক বোঝাতে তুলনা টেনেছেন জল থাকলেও পানীয় জলের অভাবের সঙ্গে।
তবে শুধু চাকরি নয়, উদ্যোগপতি হওয়ার ক্ষেত্রেও মানসিকতা ও শিক্ষা ব্যবস্থার বদলের কথা বলছেন এ দিনের সভার মূল বক্তা তথা শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স-এর ভাইস চেয়ারম্যান সুনীল কানোরিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই শুধু চাকরি কেন চাইবেন? উদ্যোগপতি হয়েও অন্যদের চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে। আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সেই মানসিকতা গড়তে পাঠ্যক্রমেও প্রয়োজনীয় বদল আনতে হবে।’’ পাশাপাশি সব ক্ষেত্রেই নিজের দক্ষতা বাড়াতে নিজেকে ক্রমাগত ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সুতনু ঘোষ জানিয়েছেন, শিল্প ও শিক্ষার মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে তাঁরা মূলত তিনটি পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রথমত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পের মধ্যে সমন্বয় সাধন। এবং পরে বিদেশের মতো এ দেশেও গবেষণায় শিল্পের আর্থিক সাহায্য করার প্রথা চালু করা। দ্বিতীয়ত, শিল্পের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাকে প্রাসঙ্গিক করতে পাঠ্যক্রমের পুনর্মূল্যায়ন। এ জন্য ইতিমধ্যেই বণিকসভাটি রাজ্যকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। তৃতীয়ত, বণিকসভাটির সদস্যরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের ‘কাউন্সেলিং’ করবেন। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রম সংশোধন করেছে রাজ্য।