কত দিনে ক্ষত সারবে! বহাল সংশয়ও

আশঙ্কা বুকে নিয়েই অপেক্ষা জ্বালানির

শিল্পে প্রাণ ফেরাতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অবিলম্বে কেন্দ্রকে যে মোটা পুঁজি ঢালতে হবে, তা নিশ্চিত। কিন্তু ভাঁড়ে মা ভবানী।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৯
Share:

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি যে ভাবে ৫ শতাংশে নেমেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতির ক্ষত গভীর।

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রথম দফায় (২৩ অগস্ট) অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের একগুচ্ছ প্রস্তাবে ভর করে গত সোমবার সেনসেক্স প্রায় ৭৯৩ পয়েন্ট উঠেছিল। কিন্তু পরে এই উত্থান ধরে রাখতে পারেনি। কারণ, অর্থনীতি যে ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে, নানা পরিসংখ্যানে তা আরও স্পষ্ট হয়। এই অবস্থায় লগ্নিকারীদের ভরসা কেন্দ্রের দফায় দফায় ঘোষণা করা নানা পদক্ষেপ। যে তালিকায় ব্যাঙ্কে পুঁজি জোগানো, বিদেশি লগ্নিকারীর সারচার্জ ফেরানো বা গাড়ি শিল্পকে নানা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ঢুকেছে ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে ৪টি শক্তিশালী ব্যাঙ্ক তৈরির ঘোষণা ও এক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসা, কয়লা খননের মতো ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির শর্ত শিথিলে মন্ত্রিসভার সায়। কেন্দ্রের দাবি, অর্থনীতি চাঙ্গা করার জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে এগুলি।

Advertisement

তবে একাংশের মনে সংশয়ও যথেষ্ট। এই আর্থিক সঙ্কট যে অতি দ্রুত কাটার নয়, তা বুঝতে পারছেন তাঁরা। বলছেন, উৎসবের মরসুম দরজায় থাকায় কিছু পণ্যের সাময়িক চাহিদা হয়তো ফিরবে। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি যে ভাবে ৫ শতাংশে নেমেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতির ক্ষত গভীর। ফলে প্রশ্ন উঠছেই কত দিনে তা সারবে? কবে স্বস্তির শ্বাস ফেলবেন লগ্নিকারীরা?

শিল্পে প্রাণ ফেরাতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অবিলম্বে কেন্দ্রকে যে মোটা পুঁজি ঢালতে হবে, তা নিশ্চিত। কিন্তু ভাঁড়ে মা ভবানী। রাজকোষ ঘাটতি চার মাসেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৮%। শিল্প ঝিমিয়ে পড়ায় ও মানুষের আয় কমায় আশানুরূপ বাড়ছে না প্রত্যক্ষ কর ও জিএসটি আদায়। কেন্দ্রকে ভাগ বসাতে হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে। যা ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই তহবিল দিয়ে সমস্যা সাময়িক ভাবে সামলানো গেলেও, বড় মেয়াদে ক্ষত কতটা সারাতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। যে ভাবে দ্রুত পণ্যের চাহিদা কমছে এবং বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, তা থেকে বেরোনো রাতারাতি সম্ভব নয়। এই সমস্যা মেটাতে কেন্দ্র আর কী ঘোষণা করে, তারই অপেক্ষায় সকলে।

তবে সুখের কথা, সব জায়গায় যখন সুদ কমছে, তখন ইপিএফে সুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রম মন্ত্রক। ফলে ২০১৮-১৯ সালের জন্য জমা তহবিলে কর্মীরা সুদ পাবেন ৮.৬৫%। পিপিএফে এখন সুদ ৭.৯%। গত সপ্তাহে দেশে ১০ গ্রাম খাঁটি সোনার দাম বাড়ায় এই ধাতুতে লগ্নির উপর রিটার্ন ছাপিয়ে গিয়েছে ইকুইটি ও ফান্ডের সাম্প্রতিক রিটার্নকে।

লগ্নিকারীদের দুশ্চিন্তা বহাল চিন-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ নিয়েও। দু’দেশের মধ্যে ফের আলোচনার সম্ভাবনায় গত শুক্রবার কিছুটা তেতে ওঠে বাজার। সেনসেক্স বাড়ে ২৬৪ পয়েন্ট। ওঠে টাকার দামও। ৩৮ পয়সা পড়ে এক ডলার দাঁড়ায় ৭১.৪২ টাকা। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কট নিয়ে আশঙ্কা বাড়িয়ে রবিবার ফের একে অপরের পণ্যে নতুন করে শুল্ক বসিয়েছে দু’দেশ। এমনকি এই প্রথম মার্কিন অশোধিত তেলে কর চাপিয়েছে বেজিং। ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের বাজারে তা কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চিন্তা থাকছেই।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন