সুপারিশে জিএসটির হার ১৮ শতাংশের মধ্যেই

পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে রাজনীতির অঙ্কও মেলানোর চেষ্টা করলেন অর্থনীতির মাস্টারমশাই। শুক্রবার মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের সুপারিশে দেখা গেল, সেখানে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির পথ পুরোদস্তুর খোলা রেখেছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:০৪
Share:

পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে রাজনীতির অঙ্কও মেলানোর চেষ্টা করলেন অর্থনীতির মাস্টারমশাই।

Advertisement

শুক্রবার মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের সুপারিশে দেখা গেল, সেখানে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির পথ পুরোদস্তুর খোলা রেখেছেন তিনি। সাধারণ ভাবে জিএসটির হার ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার কথা যেমন বলেছেন, তেমনই প্রস্তাব দিয়েছেন শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য ১% বাড়তি লেভি না-বসানোর। অর্থাৎ, জিএসটি বিল নিয়ে কংগ্রেস যে আপত্তি তুলেছিল, তাতে জল ঢালার মশলা মজুত রয়েছে সুব্রহ্মণ্যনের সুপারিশে। তবে বিরোধীদের তৃতীয় দাবিটির সঙ্গে একমত হতে পারেননি তিনি। জানিয়েছেন, করের হার বদলানোকে সংবিধান সংশোধনের আওতায় রাখার পক্ষপাতী নন তিনি।

এ দিনই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে নিজের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট জমা দেন সুব্রহ্মণ্যন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, সব পণ্য ও পরিষেবার উপর এক হারে কর বসিয়ে যদি এখনকার মতো একই রাজস্ব সংগ্রহ করতে হয়, তা হলে তা (রেভিনিউ নিউট্রাল রেট) হওয়া উচিত ১৫ থেকে ১৫.৫ শতাংশের মধ্যে। এর মধ্যে তাঁদের অগ্রাধিকার আবার কমটিই (১৫%)।

Advertisement

আর একটি বিকল্প ব্যবস্থারও সুপারিশ করেছেন সুব্রহ্মণ্যন। সেখানে তাঁর পরামর্শ, বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবার উপর কর চাপুক ১৭-১৮ শতাংশর মধ্যে। বিশেষ কিছু অত্যাবশ্যক পণ্যে তা হোক ১২%। আবার দামি গাড়ির মতো বিলাসবহুল সামগ্রী এবং পানমশলা, ঠাণ্ডা পানীয়, তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যের উপর কর চাপানো হোক ৪০% হারে। যাতে কিছুটা হতাশাই প্রকাশ করেছে মার্সিডিজ বেঞ্জ।

তবে শেষ পর্যন্ত জিএসটি চালু হলে, একটিই কর থাকবে না কি একাধিক হারে বসবে, তা ঠিক করবে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি জিএসটি পরিষদ। কোন পণ্যে কত হারে কর বসবে, তা-ও চূড়ান্ত করবে তারা। সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’’ আদায় হওয়া রাজস্ব কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কী ভাবে ভাগ হবে, তা-ও ঠিক করবে পরিষদই।

সম্প্রতি সনিয়া ও রাহুল গাঁধী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, জিএসটি নিয়ে যে তিন শর্ত কংগ্রেস রেখেছে, তা নিয়ে দর কষাকষির কোনও প্রশ্ন নেই। শর্তগুলি হল—(১) জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা। (২) জিএসটি বিলে লিখিত ভাবে সেই হার উল্লেখ করা। (৩) শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য প্রস্তাবিত বাড়তি ১ শতাংশ লেভি তুলে দেওয়া। উল্টো দিকে জেটলির মত ছিল, সব শর্ত মানতে গেলে আখেরে অর্থনীতির ক্ষতি। অর্থ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট সূত্রও জানিয়েছিল, আপাতত ১৮ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা যদি বা স্থির করা যায়, বিলের অংশ হিসেবে তা পেশ করা শক্ত। কারণ, তখন ভবিষ্যতে ওই হার বাড়াতে বা কমাতে গেলেই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। যা যথেষ্ট ঝক্কির। এ দিন সুব্রহ্মণ্যনের সুপারিশে স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের দু’টি দাবি মানতে তাঁর কমিটির আপত্তি নেই। কিন্তু মাঝেরটি মানার পক্ষপাতী নন তিনিও।

এক নজরে

• রাজস্ব আদায় একই থাকবে, এমন অভিন্ন করের হার (রেভিনিউ নিউট্রাল রেট): ১৫-১৫.৫%

• অত্যাবশ্যক পণ্যে: ১২%

• বিলাসবহুল এবং ক্ষতিকর সামগ্রীতে (দামি গাড়ি, সিগারেট, পানমশলা ইত্যাদি): ৪০%

• দামি ধাতুতে: ২-৬%

• বাকি প্রায় সব পণ্য-পরিষেবায়: ১৭-১৮%

• আন্তঃরাজ্য বিক্রিবাটায় বাড়তি ১% লেভি না-বসানো

• সংবিধান সংশোধনীর বাইরেই থাক করের হার

• আগামী দিনে পেট্রোপণ্য, মদকেও আনা হোক জিএসটির আওতায়

বিরোধী দল ছাড়াও আমজনতা ও শিল্পমহলের আশঙ্কা, জিএসটির হার খুব বেশি হলে, ফের মাথাচাড়া দেবে মূল্যবৃদ্ধি। তার জেরে চাহিদা কমায় শ্লথ হবে অর্থনীতিও। যে কারণে শিল্পমহলেরও দাবি ছিল, জিএসটির হার রাখা হোক ১৮ শতাংশের নীচে। সে দিক থেকে সুব্রহ্মণ্যন স্বস্তি দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, প্রস্তাবিত হারে কর বসানো হলে চড়া মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা কম।

আপাতত পেট্রোল-ডিজেলের মতো পেট্রোপণ্য জিএসটির বাইরে থাকবে। কারণ, রাজ্যগুলি সেগুলিতে কর বসিয়ে আয়ের ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয়। একই কারণে তালিকা থেকে বাদ অ্যালকোহল (মদ)। সুব্রহ্মণ্যন এই বিষয়গুলিও সংবিধানে রাখার বিরোধী। বরং তাঁর মতে, যত শীঘ্র সম্ভব এগুলিকেও আনা উচিত জিএসটির আওতায়। এমনকী শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো পরিষেবাকেও এর আওতায় আনার পক্ষপাতী তিনি। তাঁর মতে, জিএসটির জাল যত বিস্তৃত হবে, তত কমবে তার হার।

সুব্রহ্মণ্যনের যুক্তি, দেশে শিল্পোৎপাদন বাড়াতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি সফল করতে চান প্রধানমন্ত্রী। সে জন্য ‘মেকিং ওয়ান ইন্ডিয়া’ বা সারা দেশকে একটি বাজার করে তোলাও জরুরি। আর সেই কারণেই আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যে অতিরিক্ত কর চান না তিনি।

উপদেষ্টার দাবি, জিএসটির হার খুব বেশি হলে কম আয়ের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের তুলনা হত। খুব কম হলে আবার তাকে বসানো হত কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যগুলির সারিতে। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চালু গড় হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখারই চেষ্টা করেছেন। এই সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে বণিকসভা ফিকি-র দাবি, এতে জিএসটির হার নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হল। অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হার মতে, ‘‘এই সুপারিশ জিএসটি চালুর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’’ তবে কংগ্রেস বলেছে, জিএসটি নিয়ে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেনি তারা।

১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা যাবে কি না, এ দিন সেই প্রশ্নের জবাব দেননি সুব্রহ্মণ্যন। তবে আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসের দাবি, ‘‘সংসদে বিল পাশের প্রক্রিয়া যেমন চলছে, তেমনই প্রশাসনিক কাজও থেমে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন