(বাঁ দিকে) গয়ালের সঙ্গে মণীশ গুপ্ত। মাঝে শোভনদেব। -নিজস্ব চিত্র
কয়লার দামে রাজ্য সরকারের সেসের হার প্রতি টনে ২৫ শতাংশ। অন্য রাজ্যের তুলনায় তা অনেকটাই বেশি বলে অভিযোগ এনেছে কেন্দ্র। সোমবার কলকাতায় এসে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক বৈঠকে ওই সেস-ই কমানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। এ ব্যাপারে তিনি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এটিকে রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রের অনধিকার হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো বলে অভিযোগ এনেছেন শোভনদেববাবু।
গয়াল এ দিন বলেন, ‘‘আমি চাই রাজ্য একটি কমিটি গঠন করে খোলা মনে সেস-এর বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করুক। কারণ অন্যান্য রাজ্যে ১৪% রয়্যালটি নেওয়া হয়ে থাকে।’’ তাঁর দাবি, অন্য রাজ্য যদি ১৪% রয়্যালটি নিতে পারে তা হলে পশ্চিমবঙ্গও পারবে। এতে রাজ্যের লোকসান হবে না। বরং কয়লা উৎপাদন বাড়লে রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে বলেই গয়াল মনে করেন। প্রসঙ্গত, অন্য রাজ্যে সেস নেই। তারা নিজেদের খনন করা কয়লায় রয়্যালটি নেয়।
গত শনিবারই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রের নাক গলানো ও আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্র মাথা গলাতে চাইছে বলেও মমতা অভিযোগ করছেন। এ দিন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর সেস কমানোর প্রস্তাবটিও সেই ধরনেরই আচরণ বলে মনে করছেন রাজ্যের প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। গয়ালের সঙ্গে এ দিনের বৈঠকে মণীশবাবুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, কমিটি গঠনের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিতেই পারেন। কিন্তু সেস কমানোর বিষয়টি রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলেই তাঁরা মনে করছেন। কারণ সেস থেকে যে-রাজস্ব আদায় হয়, তা প্রাথমিক শিক্ষা-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করা হয় বলে মণীশবাবু জানান। তিনি বলেন, কেন্দ্র নিজেই টন পিছু ২০০ টাকা সেস বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্র কয়লার উপরে ৩০০ শতাংশ সেস বাড়িয়েছে বলে তাঁর দাবি। মণীশবাবুর কথায়, ‘‘কেন্দ্র যদি কয়লার দাম কমাতেই চায়, তা হলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না-করে তারাই কয়লার উপর সেস ও রেলের পণ্য মাসুল কমিয়ে দিক।’’
গয়ালের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে শোভনদেববাবু বলেন, ‘‘কমিটি গঠন করা হলে তারা সব কিছু খতিয়ে দেখবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আমাদের মতামত ও দাবিগুলি কমিটির কাছে পেশ করব।’’ গয়াল জানিয়েছেন, রাজ্যের বিদ্যুৎসচিবকে মাথায় রেখে কমিটি গড়া হবে। সদস্য হিসেবে কোল ইন্ডিয়ার বিভিন্ন বিভাগের ডিরেক্টররা থাকবেন। চার সপ্তাহে কমিটির রিপোর্ট দেওয়া উচিত বলে গয়াল মনে করেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার এখন কয়লার সেস থেকে বছরে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। আর প্রটি টনে ৭ টাকা রয়্যালটি হিসেবে বছরে ৯০০ কোটি টাকা পেয়ে থাকে।