রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ থেকে উর্জিত পটেলের ইস্তফা কেন্দ্র চায়নি। বরং তাঁর সঙ্গে দুই বোর্ড বৈঠকে আলোচনা মসৃণ ভাবে এগিয়েছিল বলেই দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। একই সঙ্গে ফের জানালেন, নিছক রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে কিংবা সরকারি প্রকল্পে টাকা উপুড় করার জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের তহবিলের এক টাকা ভাগও তাঁরা চান না। মে পর্যন্ত তা তাঁর দরকারই নেই।
অর্থমন্ত্রী ফের বুক ঠুকে এই দাবি করলেও, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, ভাঁড়ারের ভাগ যদি পাখির চোখ না হয়, তাহলে সেই সংক্রান্ত নিয়ম সংশোধনের জন্য কেন্দ্র এত উদগ্রীব কেন? কেনই বা এ দিনও জেটলি ফের মনে করিয়েছেন যে, সারা বিশ্বে অনেক শীর্ষ ব্যাঙ্ক অর্থনীতিতে হঠাৎ আসা ঝড়ঝাপটা সামাল দিতে নিজেদের মোট সম্পদের ৮% মতো তহবিলে তুলে রাখে। সাবধানীরা ১৩-১৪ শতাংশ। সেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে তা ২৮%। এর পাশাপাশি, অনুৎপাদক সম্পদে রাশ টানতে নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১১টি ব্যাঙ্কের উপর যে নানা নিষেধাজ্ঞা চাপানো রয়েছে, তা শিথিল করতেও কেন্দ্রের চাপ বাড়ানোর কথা কেন বারবার শোনা যাচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্নও।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, মঙ্গলবার জেটলি বিষয়টি ফের তুলেছেন সোমবার এ নিয়ে প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং মার্কিন মূল্যায়ন বহুজাতিক এসঅ্যান্ডপি-র জোড়া হুঁশিয়ারির সামনে পড়ে।
রাজনের আশঙ্কা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের ভাগ কেন্দ্রের কোষাগারে গেলে, তার ছাপ পড়তে পারে ক্রেডিট রেটিংয়ে। যা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। এসঅ্যান্ডপি-ও বলেছে, আশপাশের দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের তুলনায় বরাবরই বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্যও পোক্ত। কিন্তু সরকার তার উপরে লাগাতার ও জোরদার চাপ তৈরি করলে, সেই ব্যবস্থা ক্ষয় হতে পারে। ধাক্কা খেতে পারে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা। শুধু তা-ই নয়, মূল্যায়ন সংস্থাটি স্পষ্ট জানিয়েছে, গভর্নর পদ থেকে উর্জিৎ পটেল যে ভাবে সরে দাঁড়িয়েছেন, তা শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাল রেটিংয়ের পক্ষে ভাল নয় বলেই তাদের হুঁশিয়ারি। এই উদ্বেগে জল ঢালতেই অর্থমন্ত্রী এ দিন ফের মুখ খুলেছেন বলে ধারণা অনেকের।