মেধাস্বত্বকে (পেটেন্ট) ‘পাশ কাটিয়ে’ বহুজাতিক সংস্থার ওষুধের সস্তা সংস্করণ তৈরির অনুমতি দেওয়ার অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে বলে ফের জানিয়ে দিল মোদী সরকার। এবং সম্প্রতি ওই অনুমোদনে রাশ টানার যে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, তা ঠিক নয় বলে দাবি করল কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের বিবৃতি।
সম্প্রতি এক মার্কিন উপদেষ্টা গোষ্ঠী জানিয়েছিল মেধাস্বত্বকে (পেটেন্ট) ‘পাশ কাটিয়ে’ বহুজাতিক সংস্থার ওষুধের সস্তা সংস্করণ তৈরির ঢালাও অনুমতিতে রাশ টানার ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। এখনও সরকারি ঘোষণা না-হলেও, অন্তত ঘরোয়া আলোচনায় কেন্দ্র এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার তখন তা নিয়ে কোনও ঘোষণা করেনি। এই বিষয়ে মন্তব্য করেননি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বরং পদস্থ অফিসাররা দাবি করেছিলেন, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রোগীদের স্বার্থ মাথায় রাখবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে সস্তার ওষুধ তৈরির ওই ধরনের লাইসেন্স দিতে পারে কেন্দ্র। যাতে বহুজাতিকের দামি ওষুধ কিনতে না-পারার কারণে গরীব মানুষের চিকিৎসা না আটকায়। অন্তত ওই সমস্ত ওষুধের এ দেশে তৈরি সস্তা সংস্করণ কিনতে পারেন তাঁরা। সেই কারণেই ভারতে পেটেন্ট আইন ভাঙা নিয়ে বারবার আঙুল তোলে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার ওষুধ বহুজাতিকগুলি। আবার উল্টো দিকে, বিভিন্ন অসরকারি সংস্থা মনে করে, সরকার সত্যিই এ ধরনের কথা দিয়ে থাকলে, তা চিন্তার বিষয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন বিশেষত গরীব ক্যান্সার রোগীরা।
সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে (ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ বা ইউএসটিআর) এক রিপোর্টে কেন্দ্রের ওই আশ্বাসের কথা জানিয়েছিল ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসআইবিসি)। জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকার অন্তত ঘরোয়া আলোচনায় তাদের আশ্বাস দিয়েছে পেটেন্ট আইনকে পাশে সরিয়ে রেখে সস্তার ওষুধের ঢালাও বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি না দেওয়ার। পরে এ নিয়ে সংবাদ সংস্থার তরফে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য মুখ খুলতে রাজি হয়নি ইউএসআইবিসি।
দু’বছর ধরেই ওষুধের ক্ষেত্রে পেটেন্ট আইন ঠিক ভাবে না মানার অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে করে আসছে আমেরিকা। এ নিয়ে বারবার তোপ দেগেছে মার্কিন ওষুধ সংস্থাগুলি। তাদের অভিযোগ, গবেষণায় বহু টাকা খরচ করে তারা যে ওষুধ তৈরি করে, ভারতীয় সংস্থাগুলিকে তার সস্তার সংস্করণ তৈরি করতে ঢালাও অনুমোদন দেয় দিল্লি। এ জন্য মেধাস্বত্বকে পাশে সরিয়ে রেখে যে আইনি রাস্তায় হাঁটা হয়, তা নিয়ে বারবার আপত্তি তুলেছে তারা। এই আইনি ব্যবস্থা বদলানোর জন্য লাগাতার কেন্দ্রের কাছে দরবারও করে চলেছে পশ্চিমী ওষুধ বহুজাতিকগুলি।