Share Market

অস্থির বাজারে সতর্ক লগ্নিকারী, নজর ভোটে

গত সপ্তাহে ভাল রকম বেড়েছে বাজারের অস্থিরতা সূচক বা ইন্ডিয়া ভোলাটিলিটি ইনডেক্স (ভিক্স)। শুক্রবার ৮.৭২% বেড়ে তা পৌঁছেছে ১৪.৬২-তে। ভিক্স বৃদ্ধির অর্থ, অনিশ্চয়তা বাড়ছে কিংবা বার বার তা ফিরে আসছে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ০৬:১৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বাজার এখন বড় অস্থির। সকালে ভাল উত্থান তো বিকেলেই পতন। আগের লেনদেনে ৬০০ পয়েন্ট নেমে যাওয়ার পরে গত সোমবার সেনসেক্স এক লাফে বেড়েছিল ৯৪১। পরের দু’দিনে আরও ৬০ মতো ওঠার পরে শুক্রবার ফের গোত্তা খেয়ে পড়ে যায় ৭৩৩। অথচ ওই দিন সকালের দিকে সূচক যথেষ্ট তেজী ছিল। ৪৮৪ পয়েন্ট বেড়ে ছুঁয়ে ফেলেছিল ৭৫,০৯৫। কিন্তু তার পরেই ১৬২৭ পয়েন্টের ধস নামে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই। দিনের শেষে সেনসেক্স থিতু হয় ৭৩,৮৭৮ অঙ্কে। নিফ্‌টি সে দিন লেনদেন চলাকালীন উচ্চতার নতুন শিখরে পা রেখেছিল। কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি। এই অস্থির বাজারে অনেক লগ্নিকারী বুঝতে পারছেন না ঠিক কী করা উচিত।

Advertisement

গত সপ্তাহে ভাল রকম বেড়েছে বাজারের অস্থিরতা সূচক বা ইন্ডিয়া ভোলাটিলিটি ইনডেক্স (ভিক্স)। শুক্রবার ৮.৭২% বেড়ে তা পৌঁছেছে ১৪.৬২-তে। ভিক্স বৃদ্ধির অর্থ, অনিশ্চয়তা বাড়ছে কিংবা বার বার তা ফিরে আসছে। প্রশ্ন হল, যে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার গত অর্থবর্ষের তিনটি ত্রৈমাসিকেই ৮% পেরিয়ে গিয়েছে, সেখানে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি বা সামান্য কমেও আবার ফিরে আসার কারণ কী? বিশেষত গত কয়েক মাস ধরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধিও একটু একটু করে মাথা নামাচ্ছে। খতিয়ে দেখলে অস্থিরতার যে সমস্ত কারণ সামনে আসছে, সেগুলি হল—

  • খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চড়ে থাকায় আশু সুদ কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়া।
  • এই দফায় আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভেরও সুদ স্থির রাখা এবং তা কবে কমানো হতে পারে সে সম্পর্কে কোনও ইঙ্গিত না দেওয়া।
  • বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার মাথাচাড়া দেওয়া।
  • আন্তর্জাতিক বাজারে চড়ে থাকা অশোধিত তেলের দাম।
  • ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের লাগাতার পতনের জেরে ভারতীয় মুদ্রার তলানিতে নামা।
  • রফতানি বাণিজ্যে ধাক্কা।
  • প্রবল তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা পরিস্থিতি এবং তার জেরে কৃষি ফলনে ক্ষতির আশঙ্কা।
  • শেয়ারের দাম চড়ে থাকায় বাজার অল্প উঠলেই বিক্রির চাপ তৈরি হওয়া।
  • নির্বাচনজনিত অনিশ্চয়তা এবং লগ্নিকারীদের সতর্ক পদক্ষেপ।
  • গত জানুয়ারি-মার্চে বহু সংস্থার আর্থিক ফল আশানুরূপ না হওয়া।
Advertisement

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটের উপর ভাল থাকা সত্ত্বেও এত সব অনিশ্চয়তার কারণে বাজার একটু বাড়লেই এক শ্রেণির লগ্নিকারী হাতের শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলে নেওয়াকে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন। তবে একটু বড় মেয়াদে বাজার সম্পর্কে আশাবাদী অনেক বিশেষজ্ঞই। কারণ, অনিশ্চয়তার কয়েকটি সাময়িক। সেগুলি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে আশা, সূচক ফের নতুন উচ্চতায় পাড়ি দেবে। অর্থাৎ বাজারের তেমন বড় পতনের আশঙ্কা অনেকেই করছেন না। যে সব কারণে সূচক ফের উঠতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—

  • এপ্রিলে রেকর্ড জিএসটি আদায়। নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাসেই জমা পড়েছে ২,১০,২৬৭ কোটি টাকা।
  • এ বার বর্ষা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হওয়ার পূর্বাভাস।
  • গত মাসে কারখানা থেকে ৩.৩৮% বেশি গাড়ি বিক্রেতা বা ডিলারদের শো-রুমে বিক্রির জন্য পাঠানো। এপ্রিলে খুচরো বাজারে ৯.৮% হারে গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি।
  • নির্বাচনের পরে দেশে শক্তিশালী স্থায়ী সরকার গঠনের আশা। যা বাস্তবে মিলে গেলে ভারতের শেয়ার বাজার আরও চড়বে। ফল আশানুরূপ না হলে সাময়িক পতনের আশঙ্কাও বহাল।
  • বিদেশি লগ্নিকারীদের নজর। ভারতের বাজারে তারা এখন যতটা না শেয়ার কিনছে, তার থেকে বেশি বিক্রি করছে। কিন্তু এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধি তাদের উৎসাহ কেড়ে নেয়নি। ফলে শক্তিশালী সরকার তৈরি হলে বিদেশি লগ্নিকারীরা পুঁজি নিয়ে ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।

নির্বাচনের ফলাফল বেরোতে আর এক মাসও বাকি নেই। তত দিন পর্যন্ত বাজার কিছুটা চঞ্চল থাকতে পারে। আগামী ৪ জুন ভোট গণনার পরে সূচকের গতিপথ অনেকটাই নির্ধারণ করবে সেই ফলাফল। ভারতীয় অর্থনীতি এবং বাজারের প্রতি আস্থা থাকায় নির্বাচনী অস্থিরতা সত্ত্বেও মে মাসে বাজারে শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলার (নতুন ইসু) পথে হাঁটবে বিভিন্ন সংস্থা। ১০,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূলধন সংগ্রহ করতে চায় তারা। অর্থাৎ বিভিন্ন দফায় নির্বাচন চলার পাশাপাশি চলতে থাকবে একগুচ্ছ নতুন ইসু-ও। এদের মধ্যে থাকতে পারে গো ডিজিট জেনারেল ইনশিয়োরেন্স (আনুমানিক ৩৫০০ কোটি টাকা) ও আধার হাউজ়িং (আনুমানিক ৩০০০ কোটি টাকা)।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন